সুচির অভিজাত পদক কেড়ে নিলো অ্যামনেস্টি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির আরো একটি মানবাধিকার বিষয়ক অভিজাত পদক কেড়ে নিলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সুচি এক সময় মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন, তার বর্তমান অবস্থা সেই মর্যাদার সঙ্গে ‘লজ্জাজনক এক প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি। এ নিয়ে সুচির কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হল গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদক। এর মধ্যে রয়েছে ইউএস হলোকাস্ট মিউজিয়ামের দেয়া ‘ইলি উইসেল অ্যাওয়ার্ড’, বেশকিছু ‘ফ্রিডম অব দ্য সিটি অ্যাওয়ার্ড’। তার কাছ থেকে ‘ফ্রিডম অদ দ্য সিটি অ্যাওয়ার্ড’ কেড়ে নিয়েছে এডিনবার্গ, অক্সফোর্ড, গ্লাসগো ও নিউ ক্যাসেল। সোমবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সুচি বর্তমানে মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী। তবে তিনি আর আশার প্রতীক নন। এজন্য অ্যামিনেস্টি তাদের দেয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনসাইন্স অ্যাওয়ার্ড’ বাতিল করছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতার বিষয়ে তার উদাসীনতার কারণে সংস্থাটি তাকে দেয়া এ সম্মাননা প্রত্যাহার করেছে। ১৫ বছর গৃহবন্দি থাকাকালীন ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি তাকে তাদের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনসাইন্স’ প্রদান করে। তবে সম্মাননা প্রত্যাহার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেন নি সুচি।

সংস্থাটির প্রধান কুমি নাইডোর পক্ষ থেকে অং সান সুচিকে দেয়া চিঠি সোমবার প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে জানানো হয়, আমরা গভীর হতাশার সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আশা, সাহস এবং মানবাধিকারের অক্ষয় প্রতীক হিসেবে আপনি আর নিজেকে উপস্থাপন করেন না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর অব কনসাইন্স সম্মাননার বাহক হিসেবে আপনার যোগ্যতা বিচার করতে পারছে না। তাই গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা আমাদের সম্মাননা প্রত্যাহার করছি।
সম্মাননা প্রত্যাহার বিষয়ক তথ্য মিয়ানমারের নেত্রীকে জানানো হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এক সময়কার গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করা নেত্রী ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নৃশংসতার বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করায় আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সম্মাননা হারিয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, অং সান সুচির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযানের কথা উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, গত বছর নিধনযজ্ঞ চলার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে হাজারো মানুষ। ধর্ষিত হয়েছেন অগণিত নারী ও শিশু, আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায় নি বৃদ্ধ, শিশু এবং কিশোরও। শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় অস্বীকার করে অং সান সুচি ও তার দপ্তর তাদেরকে রক্ষা করেছেন। সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গাদের পক্ষে অং সান সুচির দাঁড়ানোর ব্যর্থতাই এর মূল কারণ। অ্যামনেস্টির ভাষায়, ভয়ঙ্কর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের এসব ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে কিংবা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত লাখো রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নের বা পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। নৃশংসতা থামাতে ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগ কেমন হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায়, যখন একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের কথা অস্বীকার করে রাষ্ট্রযন্ত্র।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *