স্পোর্টস ডেস্ক:: সিলেটের ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের জয়ে প্রয়োজন ৩২১ রান। তৃতীয় দিনের শেষ বিকালে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৬ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিকরা। হাতে আছে ১০ উইকেট এবং দু’দিন। এই সময়ে বাংলাদেশকে আরও ২৯৫ রান করতে হবে। আর এটা করতে পারলে নতুন ইতিহাস হবে। তার কারণ বাংলাদেশের মাঠে এত বড় স্কোর তাড়া করে জেতেনি কোনো দল।
বাংলাদেশে সর্বোচ্চ (৩১৭) রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তবে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল। দেশের মাঠে রান তাড়া করে সেটাই ছিল টাইগারদের সেরা জয়। সেই দিক থেকে বললে চলতি টেস্টে জিততে হলে মাহমুদউল্লাহদের রেকর্ড গড়তে হবে।
চতুর্থ ইনিংসে এই রান তাড়া করা সত্যিই কঠিন। তাছাড়া প্রথম ইনিংসে যারা ১৪৩ রানে অলআউট হয়েছে, তাদের জন্য ৩২১ রান তাড়া করে জেতা বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ নিতে টাইগাররা কতোটা প্রস্তুত তা সময়ই বলে দেবে।
দেড়শ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়েকে আটকানোর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। দলীয় ১৩০ রানে সবশেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজাকে তাইজুল ইসলাম ফেরালে সেই টার্গেট পূরণ হবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু হলো না! সপ্তম উইকেটে রেজিস চাকাভা ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজার দৃঢ়তায় অনায়াসে দেড়শ অতিক্রম করল সফরকারীরা।
তবে তাদের গুটিয়ে দিতে খুব একটা সময় লাগেনি টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত ১৮১ রানে অলআউট হয়েছে লালচাঁদ রাজপুতের দল। এতে রোডেশিয়ানদের লিড দাঁড়িয়েছে ৩২০ রান। অর্থাৎ জয়ের জন্য বাংলাদেশের ৩২১। হাতে আছে দুই দিন।
দ্বিতীয় দিনের ১ রান নিয়ে সোমবার তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নামে জিম্বাবুয়ে। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ১ এবং ব্রায়ান চারি শূন্য রান নিয়ে খেলা শুরু করেন। সঙ্গে থাকে ১৪০ রানের লিডের আত্মবিশ্বাস। যত দ্রুত সম্ভব জিম্বাবুয়েকে অলআউট করার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। প্রাথমিক লক্ষ্য দেড়শ’র মধ্যে আটকানো। স্বাভাবিকভাবেই ওপেনিং জুটি ভাঙতে আপ্রাণ চেষ্টা চালান বোলাররা। একটু বিলম্বে হলেও সাফল্য পান তারা। ব্রায়ান চারিকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজ।
দলীয় ১৯ রানেই প্রথম উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে নেমেই স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন ব্রেন্ডন টেইলর (২৪)। অতি রোমাঞ্চপ্রিয়তার খেসারতও দিতে হয় তাকে। মায়াবি ঘাতক তাইজুল ইসলামের শিকারে পরিণত হন তিনি। তবে এতে বোলারের যতটা না কৃতিত্ব তার চেয়েও বেশি ফিল্ডারের। দুর্দান্ত ক্যাচে অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে ফেরান ইমরুল কায়েস। মিড অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে, পুরোটা সময় বলের দিকে চোখ রেখে দুহাতে দারুণ ক্যাচ নেন তিনি।
এতে দেড়শ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়েকে আটকানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু বিধিবাম! সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান মাসাকাদজা ও শন উইলিয়ামস। শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন তারা। ফলে টাইগারদের আশাও ফিকে হয়ে যায়।
তবে লাঞ্চ বিরতির পর পরই সাফল্য পান স্বাগতিকরা। দুর্দান্ত ডেলিভেরিতে শিকড় গেড়ে বসা মাসাকাদজাকে (৪৮) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান মিরাজ। এতে উইলিয়ামসের সঙ্গে ভাঙে অধিনায়কের ৫৪ রানের বিপজ্জনক জুটি। ফলে ফের দেড়শ’র মধ্যে সফরকারীদের প্যাকেট করার স্বপ্ন বুনে বাংলাদেশ।
খানিক পর প্রতিপক্ষ শিবিরে তাইজুল ইসলাম জোড়া আঘাত হানলে সেই পথে অনেকটা এগিয়ে যান টাইগাররা। এ পরীক্ষিত সৈনিক ৪২ ওভারের পঞ্চম, ষষ্ঠ বলে বোল্ড ও ক্যাচ বানিয়ে যথাক্রমে ফিরিয়ে দেন ইনফর্ম উইলিয়ামস (২০) ও পিটার মুরকে (০)। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সিকান্দার রাজাকে (২৫) সরাসরি বোল্ড করে এ বাঁহাতি স্পিনার ফেরালে সেই আশা পূরণ হবে বলেই মনে হচ্ছিল।
কিন্তু হয়নি! সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে বিরক্ত করেন রেজিস চাকাভা ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। দুজনে গড়েন ৩৫ রানের জুটি। তবে দলীয় ১৬৫ রানে মাসাকাদজাকে এলবিডব্লিউ করে মিরাজ ফেরালে তালগোল পাকিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। পরক্ষণেই নাজমুল ইসলাম অপুর শিকার হয়ে ফেরেন চাকাভা ও ব্রেন্ডন মাভুতা। আর টেন্ডাই চাতারাকে এলবিডব্লিউ করে প্রতিপক্ষ শিবিরে শেষ পেরেকটি ঠুকেন গোটা দিন দুর্দান্ত বল করা তাইজুল। অবশেষে ১৮১ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
আবারো বাংলাদেশের হয়ে বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাইজুল। ফের তার স্পিন বিষে নীল হয়েছে জিম্বাবুয়ে। প্রথম ইনিংসের (৬ উইকেট) মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এতে টেস্ট ক্যারিয়ারে এ স্পিন জাদুকরের সাফল্যে যোগ হয়েছে আরেকটি পালক। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো ৫ উইকেট শিকার করলেন তিনি। এদিন তাকে যোগ্য সমর্থন দিয়েছেন অপর দুই স্পিনার মিরাজ ও অপু। তাদের শিকার যথাক্রমে ৩ ও ২ উইকেট।