নাশকতার মামলার আসামি সিলেটের শিল্পপতি বাবুল

নিউজ ডেস্ক:: রাজনীতিবিদ না হয়েও সিলেটে নাশকতার মামলার আসামি হয়েছেন ফিজা অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি ঘটনার কিছুই জানেন না। ঘটনাস্থলেও উপস্থিত ছিলেন না। এরপরও তাকে নাশকতার মামলার আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে তার পদবি দেয়া হয়েছে মহানগর তাঁতিদলের সভাপতি হিসেবে। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিলেটের ব্যবসায়ীরা।

সিলেটের ফিজার স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম বাবুল। ২০১৩ সালের দিকে তাকে সিলেট মহানগর তাঁতিদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছিল।

রাজনীতিতে অনীহা থাকার কারণে তিনি ওই সময় পদ থেকে পদত্যাগ করেন। একই সঙ্গে তিনি রাজনীতিবিদ নয় বলে জানিয়েও দেন। তিনি ফিজা অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী হিসেবে সিলেট নগরীতে পরিচিত। সিলেটজুড়ে রয়েছে এ কোম্পানির ব্যবসার পরিধি। ২০১৩ সালে সিলেট নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলেন নজরুল ইসলাম বাবুল। ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও একই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হতে পারেননি।

সিলেটের ব্যবসায়ীদের কাছে বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত নজরুল ইসলাম বাবুল। গত ৩১শে অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় নাশকতার একটি মামলা দায়ের করেন থানার এসআই হাবিবুর রহমান। ওই মামলায় তিনি ফিজার স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম বাবুলকে ৫৮ নম্বর আসামি হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। বাবুলের নামের পাশে তাঁতিদলের মহানগর সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করেন। মামলায় আসামি হওয়ার পর নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘আমি কোনো কালেই রাজনীতি করিনি। আমাকে তাঁতিদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হলে আমি সেখান থেকে পদত্যাগ করেছি। সিলেটে আমার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমাকে আসামি করায় আশ্চর্য হয়েছি।’

সিলেট চেম্বারের সদস্য শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল। মামলা দায়েরের পর তিনি এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদের দ্বারস্থ হয়েছেন। চেম্বারের সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ জানিয়েছেন- নজরুল ইসলাম বাবুল সিলেটের একজন বড় বিনিয়োগকারী। বিষয়টি আমরা বিবেচনায় রেখেছি। এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। নজরুল ইসলাম বাবুল দাবি করেন, গেল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর তিনি ফলাফল না মেনে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। ওই মামলা এখনো চলমান। তার বিরোধী অংশের লোকজন পুলিশকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক মামলায় তাকে আসামি করেছে। এ ব্যাপারে তিনি মহানগর পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মামলার এজাহারে এসআই হাবিবুর রহমান উল্লেখ করেন, গত ৩০শে অক্টোবর সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বেআইনিভাবে জড়ো হওয়া জনতাকে তিনি কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে তারা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া করে ওই এলাকা থেকে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সলসহ ৮ জনকে আটক করেন। মামলার এজাহার সম্পর্কে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজমল বক্ত সাদেক জানান, এটি একটি সাজানো নাটক। বিএনপি নেতা পুলিশের অনুমতি নিয়েই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন। এ সময় কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসি গিয়ে বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান অনুমতি আছে কী না। জবাবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ পকেট থেকে বের করে অনুমতিপত্র দেখালেও তাদের ওখান থেকে ধরে নিয়ে আসেন।

ওই সময় এলাকায় কোনো সংঘর্ষ তো দূরের কথা হই-হুল্লোড়ও হয়নি। তিনি বলেন, এ মামলায় জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সিলেট জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়েই পুলিশ এ মামলা দায়ের করেছে বলে দাবি করেন সাদেক।

এদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনকে। নাসিম হোসাইন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। প্রায় ১৫ দিন আগে ঢাকার একটি হাসপাতালে তার হার্টের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও বাইরে বের হচ্ছেন না। পুলিশ ওই মামলায় তাকেও আসামি করেছে। মামলায় আসামি দেয়া সম্পর্কে সিলেট কোতোয়ালি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যদি মামলায় নির্দোষ কারো নাম ঢুকে যায় তাহলে তদন্তের মাধ্যমে তাদের নির্দোষ বলেই আদালতে রিপোর্ট দেয়া হবে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *