সিরিসেনার বিরুদ্ধে অভিশংসন আনছে বিক্রমাসিংহের দল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার বিরুদ্ধে অভিশংসন আনার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের দল। ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) কয়েকজন নেতা এমন পদক্ষেপের কথা জোর দিয়ে জানিয়েছেন।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ভবন টেম্পল ট্রিসে জরুরি বৈঠকে ইউএনপি এমপি সুর্যেওয়ালা সেনাসিংহে বলেন, ‘সিরিসেনার বিরুদ্ধে অভিশংসন পদক্ষেপের পক্ষে দলের বহু মন্ত্রী-এমপি প্রস্তাব করেছেন। বিষয়টি বিবেচনাধীন। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।’

প্রেসিডেন্ট ও বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সমাধান না হলে শ্রীলংকায় রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির স্পিকার কারু জয়াসুরিয়া। খবর এএফপি ও শ্রীলংকা গার্ডিয়ানের।

গত শুক্রবার বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে মাহিন্দা রাজপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ দেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। সিরিসেনার অসাংবিধানিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দিকে হাঁটছে বিক্রমাসিংহের দল।

ইউএনপির এমপি ড. জায়ামপাথি বিক্রমারাথে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করা সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী। সংবিধানের ৪৮(২) ধারা অনুসারে, ‘যদি পার্লামেন্টে নতুন সরকারের রাজস্ববিষয়ক বিল বা বাজেট প্রস্তাব ব্যর্থ করা অথবা সরকারের বিরুদ্ধে অভিশংসন পাস করা যায়, তবে বহিষ্কৃত মন্ত্রিসভা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। এমনটা হলে স্বয়ক্রিয়ভাবে প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরে পাবেন বিক্রমাসিংহে।’

বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ পদক্ষেপ রুখে দেয়ার জন্য পার্লামেন্টে ১২০ এমপির সমর্থন রয়েছে। অনাস্থা এড়ানোর জন্য প্রয়োজন ১১৩ এমপির সমর্থন।’

এমপি সেনাসিংহে বলেন, ‘নতুন প্রধানমন্ত্রীর হাতে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত পত্র ধরিয়ে দিতে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করাই সাংবিধানিক পথ।’ সিরিসেনাকে অভিশংসনের প্রতিজ্ঞা করে গণমাধ্যম ও অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের অভ্যুত্থান রুখে দেয়া হবে। পার্লামেন্টে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

আইনমন্ত্রী রনজিং বানদারা ও এমপি মুজিবর রহমানও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনার পক্ষে মত দিয়েছেন। দেশটির স্পিকার জয়সুরিয়া বলেন, ‘শ্রীলংকার এ রাজনৈতিক সংকট আমাদের পার্লামেন্টের মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু বিষয়টি যদি আমরা রাজপথ অবধি গড়াই তাহলে দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে।’

সিরিসেনার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে : পার্লামেন্ট অধিবেশন পুনরায় চালু করতে ও শ্রীলংকার সাংবিধানিক সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র।

রোববার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফানে দুজারিক বলেন, ‘শ্রীলংকার অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিন্দা প্রকাশ করেছেন মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। পাশাপাশি পার্লামেন্ট কার্যক্রম চালু করতে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস।’

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নারী মুখপাত্র হিদান নাউরেট এক বিবৃতিতে জানান, আমরা প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, শিগগিরই স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে পার্লামেন্ট কার্যক্রম চালু ও গণতান্ত্রিক প্রতিনিধির হাতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব তুলে দেয়া হোক।

শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্টের অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড রুখতে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণবিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন টেম্পল ট্রিজে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ডাক দিয়েছেন তিনি।

বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘দেশের সংকটময় মুহূর্তে নাগরিকদের রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে রাজপথে নামতে হবে। দেশের উত্তম ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এ র‌্যালিতে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মেলাতে হবে।’ খবর শ্রীলংকা গার্ডিয়ানের।

বিক্রমাসিংহে তার বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রোববার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বলেন, বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রী তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে মাহিন্দা রাজপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ দেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ২০১৫ সালের গণবিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র ফেরাতে, শান্তি ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি ৬২ লাখ জণসংখ্যার এ দেশের সবাই এক কাতারে এসেছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা র‌্যালি করেছিলাম, সমাবেশ করেছিল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে সরকারের ভণ্ডামি ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *