“ঈস্পিতা অবনী চৌধুরী”
“তুমি জানো আমার ফিরোজ গায়েন কেমন আছে?”
বেশ কয়েকবার ধরেই একটা কবিতা পড়ছিলাম। কিছু ছবি ভেসে ভেসে ওঠে আবার মিলিয়ে যায়। হয়তো মুগ্ধতা মনকে ভিড়তেই দিচ্ছে না কোন একটা শব্দে। অনেক চেষ্টার পর পুরোনো সেই মন্দিরের সামনে থামলাম। মন্দির আর মা আমার কাছে সমার্থক। যেখানেই যেমন মন্দির দেখতে পেতো, মাথা নত করে প্রণতি টুকু রেখে আসতো দেবতার উদ্দেশ্যে। বিগ্রহ থাক বা না থাক।
একবার এক বিগ্রহহীন প্রাচীন মন্দিরে সামনে দাঁড়িয়ে মা বলেছিল— জানিস দেব দেবীরা তিন জনকে খুব ভয় পান।
— কোন তিনজন?
— পাগল, প্রেমিক আর মা।
— কেন?
— এরা কী চেয়ে বসবে তার ঠিক কী? হয়তো দেবতা যা চাইছেন ঠিক তার বিপরীত কিছু চেয়ে বসলো !
আমি জানি এ আমার মায়ের কথা নয়। কোথাও হয়তো ঠিক পড়েছে। আমার সরল মা এতো ভাবতেই পারে না !
আর সেবারই গঙ্গার ধারে এক পাগলীনির সঙ্গে মুখোমুখি। তাকে আমার খুব মনে আছে। ঘাটের যে চায়ের দোকান, তার যে ছোকরা মালিক সে বলেছিলো সে নাকি স্থানীয় জমিদার বাড়ির মেয়ে। এক পাগলা শিল্পীকে ভালবেসে পাগলীনি। সে শিল্পী একে কপর্দকহীন তায় বিধর্মী। প্রেম কবে ধর্ম বুঝেছে বল? কবেই বা সম্পদ খুঁজেছে? প্রেম নিজেই তো কোহিনূর। নিজেই শিখা। সে কথা সাধারণে বুঝলে তো? জমিদারের লেঠেলরা মেরে পুঁতে দিয়েছিলো সেই পাগল গায়ক শিল্পীকে। আর পাগলী মেয়েটা তার জীবন মন সবটুকু দিয়ে খুশি করতে চেয়েছিলো মন্দিরের বিগ্রকে। সে সেবা করতো, খেতে দিতো, নাচ দেখাতো, গান গাইতো। তার বিনিময়ে একটা জিনিসই কামনা করতো। “ফিরিয়ে দাও ঈশ্বর আমার শিল্পীকে”। তপস্যা ছাপ ফেলে, ছায়া ফেলে। সে ও ক্রমশ অতীতের ছায়া হয়ে গিয়েছিলো। হয়ে গেছিলো ঘাটের পুরোনো বট গাছটার মতো। জটাযুক্ত ধুলিবর্ণ। পুজো শেষে মা প্রসাদ দিতে গেলে সে অবাক হরিণ দৃষ্টি মায়ের মুখের ওপর স্থাপন করে জানতে চেয়ছিল— “তুমি জানো আমার ফিরোজ গায়েন কেমন আছে?”