সচেতনতা বৃদ্ধি মূলক ওরিয়েন্টেশন শিশুদের সুরক্ষায় ‘চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮’ গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখছে:মীর মাহবুবুর রহমান

সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক মীর মাহবুবুর রহমান বলেছেন শিশুদের সুরক্ষায় দেশব্যাপী সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে ইউনিসেফের সহায়তায় ‘চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮’ চালু হয়েছে। শিশুদের সুরক্ষায় ‘চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮’ গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের যে কোনো প্রান্তের কোনো শিশু কোনো ধরনের সহিংসতা, নির্যাতন ও শোষণের শিকার হলে শিশু নিজে অথবা অন্য যে কোন ব্যক্তি বিনামূল্যে ১০৯৮ হেল্পলাইনে ফোন করে সহায়তা চাইতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিকার চাওয়ার পথটি সহজ হবে। তিনি বলেন শিশুদের মানসিক বিকাশ জরুরী।এখনো শিশুরা বৈষম্য নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্কুল পর্যায়ে ও কমিউনিটি পর্যায়ে জন সচেতনতা বাড়াতে হবে।

তিনি গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর বাগবাড়ীস্থ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের হল রুমে সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ইউনিসেফের সহায়তায় চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রোটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) ফেইজ-২ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশুর সহায়তায় ফোন ‘চাইল্ড হেল্প লাইন ২০৯৮’এর সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ওরিয়েন্টেমনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশের সভাপতিত্বে ও সহকারী পরিচালক মোঃ নাজিম উদ্দিনের সালনায় ওরিয়েন্টেনে বিশেষ অতিথি ছিলেন-ইউনিসেফ সিলেট এর প্রধান কাজী দিল আফরোজা ইসলাম,বিভাগীয় সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোঃ আব্দুর রফিক, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ভূঁইয়া,ইউনিসেফ এর চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার আবুল খায়ের।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ। বক্তব্য রাখেন-দক্ষিণ সুরমা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সিলেটের ডাক এর সিনিয়র রিপোর্টার হাজী এম আহমদ আলী, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার তমির হোসেন চৌধুরী,জৈন্তাপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার একে আজাদ ভূইয়া,সমাজসেবা কর্মচারী কল্যাণ সমিতি সিলেট জেলা শাখার নব নির্বাচিত সভাপতি আবুল কালাম, দিদারুল আলম প্রমুখ। সভায় বিভিন্ন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪টি থানার শিশু বান্ধব পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওরিয়েন্টেশনে বলা হয় ২০১০ সালে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৮টি থানার ২০টি ওয়ার্ডে বিসিএইচএল পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়। বিশ্বে ১৪৭টি দেশে ১৮১টি হেল্প লাইন গেস্নাবাল চালু হয়।২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই হেল্প লাইন উদ্বোধন করেন। এর প্রচার ও সফলতা বাড়াতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পরে স্স্নাইটে তা উপস্থাপন করা হয়।

১০৯৮ হেল্পলাইন কী?
এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা পরিসেবা, যা সকল প্রকার প্রভাব বা চাপমুক্ত থেকে শিশুর সুরক্ষা প্রদনে সকল প্রকার গোপনীয়তা রক্ষা করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সাধারণ ফোনের মাধ্যমেই মানুষ ১০৯৮ হেল্পলাইনের সাহায্য পেয়ে থাকে। ২৪ ঘন্টায়ই দেশের যেকোন অ ল থেকে ১০৯৮ হেল্পলাইন এ ফোন করে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
কেন দরকার হয় ১০৯৮ হেল্পলাইনের অনেক সময় শিশুরা বা বড়রা তাদের সমস্যা বা সুরক্ষা প্রয়োজন-একথাটি বন্ধু বা পরিবারের লোকজনের কাছে বলতে পারে না। যেমন : কিশোরীরা ইভটিজিং-এর শিকার হরে কাউকে বলতে ভয় পায়। সকলে ভাবে যে, তাদের সমস্যা অন্য কেউ বুঝতে পারবে না, বা নিজেদের সমস্যার কথা বললে চারপাশের সবাই তাদের সঙ্গে অন্যকম ব্যবহার করবে। কিছু ক্ষেত্রে খুব সংবেদনশীর বিষয়ও আমরা আমাদের কাছের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই না। অনেক সময় শিশুরা মুখ ফুটে কোনও কথা বলতে পারেনা কিংবা কীভাবে নিজের কথা বলা উচিত, সে সম্পর্কে কেনও স্পষ্ট ধারণা থাকে না। এ রকম পরিস্থিতিতে, হেল্পলাইনের সাহায্য নিয়ে প্রতিকার পাওয়া যাবে।

বিনামূল্যে ফোন করুন ১০৯৮ নম্বরে
শিশু নির্যাতন, শিশু পাচার, বাল্যবিবাহ রোধ করতে এবং শিশুদের আইন সেবা দিতে ১০৯৮ হেল্পলাইন সাহায্য করে; ১০৯৮ হেল্পলাইন টেলিফোন পরিসেবার মাধ্যমে শিশুর জরুরী সেবা , ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে শিশুকে উদ্ধার ছাড়াও টেলিফোনে কাউন্সিলিং সেবা দিতে থাকে; নিরাপদ আশ্রয়; পুনর্বাসন ও নেটওয়ার্কের আওতাভুক্তকরণের মাধ্যমে শিশুদেরকে সমাজে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে।
১০৯৮ হেল্পলাইন কিভাবে সহায়তা করে?

যখন কেউ ১০৯৮ হেল্পলাইনের সাহায্য চাইবে তখন প্রথমে একজন সমাজকর্মী তাদের পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করেন। তারপর হেল্পলাইনের নিজস্ব নিয়ম-কানুন অনুযায়ী সাহায্যপ্রার্থীর নাম পরিচয় ও কোন ধরনের সহায়তা চান তা জানতে চাওয়া হয়। সাহায্য প্রার্থী যদি শিশু বিষয়ক কোন সাহায্য চেয়ে থাকেন, তাহলে তাকে তার চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে সাহায্যাপ্রার্থীর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোনালাপ চলতে থাকে। সমাজকর্মী একজন সাহায্যপ্রার্থীর নাম, বয়স এবং বাসস্থান সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন, যদি কেহ তার নাম, পরিচয় বলতে না চায়,অথবা প্রকাশে অনিহা প্রকাশ করে তাহলে তা গোপন রেখে ১০৯৮ হেল্পলাইন সহযোগীতা করে থাকে। ১০৯৮ হেল্পলাইনে দেওয়া সাহায্যপ্রার্থীর তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে, বিষয়টিও এক্ষেত্রে পরিষ্কার করে জানানো হয়। সাহায্য প্রার্থীর (শিশুর জন্য) যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা যাচাই করেন এবং স্থানীয় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুলিশ, প্রবেশন কর্মকর্তা) জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। একই সাথে সমাজকর্মী শিশুটির সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে প্রতিনিয়ত ফলোআপ করে শিশুর প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন।

চাইল্ড হেল্পলাইন এর সেবা সমূহঃ
টেলিফোনিক পরিসেবা, টেলিফোনিক কাউন্সেলিং, তথ্য প্রদান, রেফারালের মাধ্যমে শিশু উদ্ধার করা,জরুরী সহায়তা সেবা প্রদান করা, জরুরী ভিত্তিতে ঝুকিপূর্ণ অবস্থান থেকে শিশুকে উদ্ধার, রাত্রিকালীন জরুরী আশ্রয় প্রদান।

যখন কোন শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে উদ্ধার করতে হয়, তখনই মোবাইল টিমই সরেজমিনে শিশুর প্রথম সংস্পর্শে আসে। শিশুর যত্ন ও সুরক্ষা বিধানের লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদী দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান করার জন্য পরিসেবা প্রদানকারীর সাথে মোবাইল টিম প্রয়োজনে লিংক করে দেয়।

মোবাইল টিম এর সদস্য কারা হতে পারেন?
প্রবেশন অফিসার,ইউএসএসও; সোস্যাল ওয়ার্কার; এনজিও প্রতিনিধি ঈডই কর্তৃক মনোনিত; পুলিশ কর্মকর্তা (ঈযরষফ ঋৎবরহফষু চড়ষরপব ঙভভরপবৎ); সুশীল সমারেজ অন্যান্য প্রতিনিধি ঈডই কর্তৃক মনোনিত।

জরুরী ভিত্তিতে শিশুর জন্য সকর ধরনের মতামত সেবা/সাড়া প্রদানের জন্য প্রবেশন অফিসার অথবা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোবাইল টিমের টিম লিডার হিসাবে কাজ করবেন।

শিশু কল্যাণ বোর্ড সংবিধিবদ্ধ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে একটি উর্ধ্বতন বডি, যা মোবাইল টিম গঠনের মাধ্যমে নিজ নিজ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কাজ করবেন, ডিডি সমাজসেবা মেম্বার সেক্রেটারী হিসেবে উক্ত টিম তত্ত্বাবধান করবেন এবং শিশু সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *