জিম্বাবুয়েও বড় চ্যালেঞ্জ আজ প্রথম ওয়ানডে

খেলাধুলা ডেস্ক:: এক সময় বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বৈরথ ২২ গজে আগুনের ঝাঁজ ছড়ালেও দু’দল এখন দুই মেরুর বাসিন্দা। দু’দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেই সেটা স্পষ্ট। বাংলাদেশ যেখানে এশিয়ার রানার্সআপ দল, জিম্বাবুয়ে সেখানে টানা দুটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

শক্তি, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, র‌্যাংকিং, হোম কন্ডিশন সুবিধা- সব বিবেচনায় বাংলাদেশের চেয়ে ঢের পিছিয়ে এই জিম্বাবুয়ে। তবে সেখানেই ভয় বাংলাদেশের। ভঙ্গুর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতলে কেউ আলাদা করে খেলোয়াড়দের প্রশংসা করবে না। কিন্তু হারলেই জাত যাবে! ঠিক এ কারণেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা।

অঘটন এড়াতে তাই আত্মতুষ্টির ফাঁদে কিছুতেই পা দিতে চান না তিনি। জিম্বাবুয়েকে হালকা করে দেখার ঝুঁকি নিতে চান না মাশরাফি। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আজ জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বেলা ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হতে যাওয়া দিবা-রাত্রির ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, গাজী টিভি ও স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট-১। এ ম্যাচ দিয়েই শুরু হচ্ছে মাশরাফিদের নতুন মৌসুম।

আর এই সিরিজ দিয়েই ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করতে চায় স্বাগতিকরা। প্রায় আট মাস পর ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামার আগে বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজ জয়ের সঙ্গে নতুনদের দেখে নেয়া।

দু’দল পরস্পরের খুবই পরিচিত। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি মুর্তজার অভিষেক হয়েছে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজার এটি বাংলাদেশে নবম সফর। সমান নয়টি সফর করেছেন এলটন চিগুম্বুরাও।

এছাড়া রস টেলরসহ অন্য ক্রিকেটারদের এই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। পরস্পরের শক্তি ও দুর্বলতাও দু’দলের খেলোয়াড়দের জানা আছে। সাকিব ও তামিম ইনজুরির কারণে দলে না থাকায় নিজেদের ভালো সম্ভাবনা দেখছে জিম্বাবুয়ে। তবে ধারে, ভারে বা আবেদনে এশিয়া কাপের ধারে কাছেও নেই জিম্বাবুয়ে সিরিজ। দুবাইয়ে এশিয়া কাপে দাপুটে ক্রিকেট খেলে এসেছে বাংলাদেশ। সেই তুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা একেবারেই ‘ছোট’।

বাংলাদেশ শিবিরে ভয় চোট নিয়ে। ছোটখাটো চোট রয়েছে মাশরাফি, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর। এছাড়া কয়েকদিন জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ছিলেন পেসার রুবেল হোসেনও। আজ তার খেলা অনিশ্চিত। বিশ্বকাপের আগে কয়েকটা পজিশনের জন্য বিকল্প খেলোয়াড় বাছাইয়ের কাজটা শুরু হবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই।

আজই অভিষেক হয়ে যেতে পারে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ফজলে রাব্বির। সাকিবের বিকল্প হিসেবেই এই বাঁ-হাতি ব্যাটিং অলরাউন্ডারকে দলে নিয়েছেন নির্বাচকরা। তামিম ইকবালের ইনজুরি ও সৌম্য দলের বাইরে থাকায় ওপেনিং জুটিতে লিটন দাসের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তকেই দেখা যাবে।

টপ অর্ডারে দেখা যাবে এশিয়া কাপে হঠাৎ ডাক পাওয়া ইমরুল কায়েসকে। সাত নম্বর পজিশনে একাদশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের। রুবেল খেলার মতো ফিট না থাকলে একাদশে জায়গা হতে পারে আবু হায়দার রনিরও।

ঘরের মাটিতে বাংলাদেশ সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে। শ্রীলংকার সঙ্গে ওই সিরিজে তৃতীয় দলটি ছিল এই জিম্বাবুয়ে। ওই সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জিতেছিল স্বাগতিকরা। তবে ফাইনালে শ্রীলংকার বিপক্ষে হেরে যায় মাশরাফিরা। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে এখন পর্যন্ত ৬৯টি ওয়ানডে খেলেছে। এর মধ্যে ৪১টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে জয় পেয়েছে ২৮টিতে। সর্বশেষ দশ ম্যাচেই জিতেছে টাইগাররা।

এদিকে মিরপুরের অননুমেয় উইকেট নিয়েই ভাবনায় দু’দল। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হওয়ায় স্পিন সহায়ক উইকেটের দিকেই নজর স্বাগতিকদের। মাশরাফির চাওয়া ভালো উইকেট। একই সঙ্গে সিরিজটা ভালোভাবে জিততে চায় বাংলাদেশ। মাশরাফি বলেন, ‘সবার প্রত্যাশা, আমরা জিতব। সেটা খুবই স্বাভাবিক। এশিয়া কাপে যেভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলেছি, এখানেও সেটাই থাকবে। হয়তো জিতলে সবাই বলবে, এটাই হওয়ার কথা ছিল। হারলে কিন্তু ভিন্ন কথা হবে।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ কবে জিতেছে জিম্বাবুয়ে, কাল সংবাদ সম্মেলনে সেটা চট করে বলতে পারলেন না অধিনায়ক মাসাকাদজা। তারপরও তিনি নিজেদের ফেভারিট দাবি করে বসলেন। সফরকারী দলের অধিনায়ক বলেন, ‘একমাত্র গ্রেয়াম ক্রেমার ছাড়া আমাদের সবাই এখানে এসেছে।বাংলাদেশকে আমরা খুব ভালোভাবেই চিনি। ফেভারিট বললে আমরা জিম্বাবুয়েকেই এগিয়ে রাখব।’

এই দলে থাকা জিম্বাবুয়ের তিন ক্রিকেটারের বাংলাদেশের বিপক্ষে এক হাজারেরও বেশি রান রয়েছে। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক হাজারের বেশি রান করা বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে রয়েছেন শুধু মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের ভাবনায় প্রতিপক্ষ নয়। নিজেদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সেটা করতে পারলে বিশ্বকাপের পরিকল্পনা ও অনুশীলন ঠিক পথেই থাকবে বাংলাদেশের।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *