বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে চান না বি. চৌধুরী

নিউজ ডেস্ক:: ঐক্যের নামে বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসাতে চান না বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য কাজ করে আসছি। এখনো বাংলাদেশের রাজনীতির গুণগতমান পরিবর্তনের জন্য একটি জাতীয় ঐক্য করতে চাই। সেই ঐক্যের জন্য আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি। তা হলো স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্ক রাখা যাবে না। রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু একটিও পূরণ হয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপি হলো দুইটি। একটি জিয়াউর রহমানের বিএনপি। আরেকটি বর্তমান বিএনপি। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গ ত্যাগ এবং জাতীয় সংসদে ক্ষমতার ভারসাম্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে বর্তমান বিএনপি’র পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এককভাবে তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য কোনো চক্রান্তে আমরা নেই।
আপাতত মনে হচ্ছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রয়েছে। এমন প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিকল্প ধারা থাকতে পারে না। আমাদের পরিষ্কার কথা যারা মুক্তিযুদ্ধের বাইরের শক্তি, দেশের মানচিত্রকে অস্বীকার করে তাদের সঙ্গে এখনো বিএনপি’র ঐক্য রয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে ঐক্যে আসতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ প্রেস ক্লাবে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, এবিষয়ে আমাদের কিছু বলা হয়নি। বরং আজ (গতকাল শনিবার) আমরা ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠকের দাওয়াত পেয়ে গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় অনেক বার মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছে। কখনো বলেননি তিনি বাসায় নেই বা অন্য কোথাও মিটিং করবেন।

এমন অবস্থায় আমরা তার বাড়িতে গিয়ে অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তিনি তো বাড়িতে ছিলেন না। এমনকি আমাদের জন্য দরজা খুলে বসতে বলার মতো কোনো লোকও ছিল না। আমাদেরকে বাসায় দাওয়াত দেয়ার পরও তিনি নিজের চেম্বারে মিটিং করেছেন। আবার প্রেস ক্লাবে অভিন্ন দাবি ও লক্ষ্যের ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলো আমাদের কাছে পরিকল্পিত মনে হয়েছে। তবে আমরা এখনো বলছি- রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য একটি জাতীয় ঐক্য চাই। ড. কামাল হোসেন যদি আমাদের দুটি দাবি মেনে নেন তাহলে তাদের সঙ্গে আমরা ঐক্যপ্রক্রিয়ায় আছি। এ ছাড়া নেই। তিনি বলেন, ভারসাম্যের রাজনীতি ছাড়া স্বেচ্ছাচার মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। তাই ভারসাম্যের রাজনীতির কথা বলছি। এ ছাড়া, দেশপ্রেম থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের ছেড়ে আসার কথা বলছি। ১৫০ আসন ছেড়ে দেয়ার বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাচারের অবসান ঘটাতে ভারসাম্যের রাজনীতির কথা বলেছিলাম। এর মানে হলো- ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০ আসনের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। যাতে কেউ এককভাবে স্বেচ্ছাচারী না হয়ে ওঠে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিকল্প ধারা মহাসচিব মেজর (অব) আবদুল মান্নান বলেন, আজকের (শনিবার) পর থেকে জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপি’র সঙ্গে বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ বিকল্প ধারা দেবে না। মান্নান বলেন, শুক্রবার আ স ম আবদুর রবের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু আমাদের জানান, শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ড. কামাল হোসেনের বেইলী রোডের বাসায় যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে ড. কামাল হোসেন বৈঠকে বসবেন। আমন্ত্রণ পেয়ে বি. চৌধুরী বিকাল সাড়ে ৩টায় ড. কামাল হোসেনের বাসায় পৌঁছান। কিন্তু ড. কামাল তখন বাড়িতে ছিলেন না এবং তার বাড়ির দরজা খোলার জন্য কোনো লোকও ছিল না। এটা শিষ্টাচারের কোন্‌ পর্যায়ে পড়ে তা সহজেই অনুমেয়। আজ দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে। প্রথমত জনগণকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে একটি ঐক্য গড়ে তোলার অপচেষ্টা। দ্বিতীয়ত নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে বিকল্প ধারার অনড় অবস্থানকে বিবেচনায় রেখে একটি চক্রের জাতির প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করা। কারা এই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে চায়- এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব আলী, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, হাফিজুর রহমান ঝন্টু, ওবায়েদুর রহমান মৃধা, আসাদুজ্জামান বাচ্চু, বিএম নিজাম প্রমুখ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *