সিলেটে কঠিন সমীকরণে দুই প্রবাসীর রাজনীতি!

অনেক আগে থেকেই তাদের আশা এমপি হবেন। কিন্তু কঠিন সমীকরণে পড়েছেন তারা দুই জন। সামনে বাঘা বাঘা প্রার্থী। নিজ দলের ভেতরেই লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে দলাদলি। নিজেদের কোন্দল থেকে দূরে রাখতে তাদের করতে হচ্ছে ভিন্ন লড়াইও। এই লড়াইয়ে তারা ক্লান্ত। জানালেন- কোন্দল কিংবা বিভক্তি নয়, সুস্থ প্রতিযোগিতায় তারা যুদ্ধে জয়ী হতে চান।

দুইজনই সিলেটের পরিচিত মুখ। প্রবাস থেকে এসে দেশে তারা নিজেদের গ্রহণযোগ্যও করে তোলেছেন। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন- কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন ও অপরজন হচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সিলেটে রাজনীতিতে এ দুটি নাম এখন বেশ আলোচিত। শুধু যে রাজনীতি তা নয়, সিলেটের আওয়ামী ধারার রাজনীতিতে দিন দিন তাদের কদর বাড়ছে। তাদের নানা নেটওয়ার্ক সিলেটের সামাজিক অঙ্গনও আলোড়িত হচ্ছে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তারা নৌকার পক্ষে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। কানাডার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সরওয়ার হোসেন। সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি কানাডায় আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। বিয়ানীবাজার বাড়ি সরওয়ার হোসেনের বাসা সিলেটের শেখঘাটে।

কানাডা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন ক্রান্তিময় সময়ে দেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। এমনকি কারাবরণও করেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কানাডা থেকে বিমানযোগে দেশে আসেন। এবং রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে ওই সময় সরকারের বিরাগভাজন হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি নিজ এলাকা থেকে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ওই সময় তিনি সিলেট-৬ গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার আসন থেকে এমপি হওয়ার জন্য লবিং করেছিলেন। কিন্তু নবাগত নেতা হওয়ার কারণে তার ভাগ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন জুটেনি। কিন্তু মাঠ ছাড়েননি সরওয়ার হোসেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি মাঠে সক্রিয়। দীর্ঘ ১০ বছরে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে তার অবস্থান সু-সংহত করেন। এখন নিজ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আসনে সরওয়ার হোসেন তৃণমূল থেকে কাজ শুরু করেন। গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনেন। বিত্তশালী হওয়ার কারণে তিনি নিজ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এমনিক ওই এলাকায় কয়েকটি স্কুলে ডিজিটাল শিক্ষা চালু করতে নিজ উদ্যোগে কম্পিউটার শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করেন। সরওয়ার হোসেন প্রতি সপ্তাহে তিন দিন নিজ এলাকায় থাকেন। বিশেষ করে সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলেই ছুটে যান। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকার কারণে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। এ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এখন নৌকার টিকিট চান। কিন্তু সামনে শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। মন্ত্রী রেখে তাকে এমপি দেয়া কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

ওদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট-২ আসনে নৌকার টিকিট পেতে প্রায় এক যুগ আগে থেকে মাঠে রয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ আসন থেকে প্রার্থী হতে জোর লবিং চালিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ জাতীয় রাজনীতির কারণে এই আসনটি ছাড় দিয়েছে জাতীয় পার্টিকে। এ আসনে সাবেক এমপি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে এ আসনে এমপি হয়েছিলেন। শফিকুর রহমান চৌধুরীও এক সময় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ছিলেন। এরপর তিনি সিলেটের রাজনীতিতে আসেন।

সিলেট-২ আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরীর রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। তার হাতেই রয়েছে নিজ এলাকার রাজনীতি। তবে- আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে রয়েছেন পুরাতন নেতারা। বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরের সাবেক নেতাদের নিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এলাকার রাজনীতি জমিয়ে তুলেছেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় ৬ মাস ধরে নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন আনোয়ার। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে মাঝে একবার লন্ডনে গিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে ফিরেও এসেছেন। তাকে নিয়ে বিশ্বনাথে শো-ডাউন করেছে দলীয় নেতারা। বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মজম্মিল আলীসহ সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে রয়েছেন। স্থানীয় নেতারা জানান- বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের রাজনীতির কর্তৃত্ব আওয়ামী লীগের হাতে থাকলেও দলীয় এমপি না থাকার কারণে তারা অনেক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। এবার এ আসনের আওয়ামী লীগের সমর্থকরা চান দলীয় প্রার্থী। সেক্ষেত্রে শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে শক্ত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কোন্দলে তিনি জড়িত হচ্ছেন না। তবে- আওয়ামী পরিবারের যারাই আসছেন তাদের তিনি ছায়া দিচ্ছেন। আগলে রেখে এলাকার রাজনীতিকে চাঙ্গা করছেন। তিনি এবার কেন্দ্রের কাছে নৌকার টিকিট চান। এলাকার মানুষ তার পক্ষে রয়েছে বলে দাবি করেন আনোয়ারুজ্জামান।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *