সরকার ধড় থেকে মুণ্ডু খসিয়ে ফেলার নীতিতে: রিজভী

নিউজ ডেস্ক::
সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের ধড় থেকে মুণ্ডু খসিয়ে ফেলার নীতিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন প্রতিনিয়ত হামলা-মামলার শিকার। কোনো কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে দেশকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এই ভোটারবিহীন সরকার।

দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।

রিজভী বলেন, ‘কোনো ওয়ার্ডেই তিনজন নেতাকর্মী একসঙ্গে চলাফেরা করতে পারছেন না। বাসাবাড়ি তছনছ করে চলে চিরুনি তল্লাশি। তুলে নিয়ে যায় কিশোর, তরুণ, ছাত্রদল, যুবদল ও অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের, এমনকি বয়স্ক বিএনপির লোকদেরও। খাল, বিল, নদীর ধারে মাইক্রো থেকে নামিয়ে চলে যেতে বলে, তারপর গুলি করা হয় পেছন থেকে। তা নাহলে কিছুদিনের জন্য, নয়তো চিরদিনের জন্য গুম করে অদৃশ্য করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, গতকাল (বুধবার) জাতীয়তাবাদী দলের উদ্যোগে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি সম্বলিত ৭ দফা এবং সুশাসনের অঙ্গীকার সম্বলিত ১২ দফা লক্ষ্যসহ একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক বরাবরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হস্তান্তরের কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় জাতীয় কবি নজরুলের ‘পুলিশ শুধু করছে পরখ কার কতটা চামড়া পুরু’ পঙক্তির উদাহরণ টেনে বলেন, ‘কর্মসূচি পালনকালে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরুলের এই নীতি প্রয়োগ করেছে।’

স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে মিছিল পণ্ড, পাইকারি হারে গ্রেফতার এবং আক্রমণে নেতা-কর্মীদের আহত করার অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘বুধবার কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ লাঠি চার্জ করে। এতে ঠাকুগাঁওয়ে ৩০ জন, মুন্সিগঞ্জে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৭ জন, মুন্সিগঞ্জে ১০ জন এবং ফেনীকে একজন জনকে গ্রেফতার করা হয়।’

এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন রিজভী।

মুফতি হান্নানকে নির্যাতন করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সরকার তারেক রহমানের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছে উল্লেখ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর সরকারের ক্রোধ, রোষ আর জিঘাংসা কত ভয়ঙ্কর, তা মুফতি হান্নানের ওপর বর্বর নির্যাতনের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে। বেআইনি শাসনের পরিসর বৃদ্ধি পাওয়াতেই ন্যায়-অন্যায়ের বিচারবোধ হারিয়ে গেছে আইন-আদালত-প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের নিকট থেকে। ফজলুল কবির, কাহার আকন্দ’রা এই দেশ ,এই সমাজেরই লোক, অথচ নিজেদের জাগতিক স্বার্থ পূরণের জন্য নির্দোষ লোকদের ফাঁসাতে জোর করে অন্য একজনের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার বিবরণ শুনে মানুষ বিমূঢ় হয়ে পড়ে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী মহাজোট সরকারের প্রধান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে আইনি মুখোশে সর্বনাশা চক্রান্তের খেলা খেলছেন, তা কারও অগোচরে নেই। এই গণবিরোধী সরকারের সঙ্গে আপোষ করা মানে মানুষের বিপণ্ন জীবনের সঙ্গে আপোষ করা।’

রিজভী বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতারা ও সরকারের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ন্যায়বিচার পাবেন কি না, সেটি নিয়ে জনগণের প্রশ্ন এখন দীর্ঘতর হচ্ছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেই বলেছেন, ‘যে দেশে প্রধান বিচারপতিই ন্যায়বিচার পায় না, সেদেশে সাধারণ মানুষ কীভাবে ন্যায়বিচার পাবে?’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *