সিলেটকে বলা হয়ে থাকে দেশের ফুটবলের দ্বিতীয় হোম ভেন্যু । কারণ সিলেটের দর্শকদের মাঝে ফুটবল নিয়ে রয়েছে বাড়তি আগ্রহ । যেখানে রাজধানী ঢাকায় ফুটবলের ম্যাচে দর্শক হয়না সেখানে সিলেটে ফুটবল নিয়ে রয়েছে বাড়তি আগ্রহ। সোমবার সিলেটে শুরু হচ্ছে সেই ফুটবল উন্মাদনা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মাঠ মাতাবেন ছয়টি দেশের জাতীয় ফুটবল দল। দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, লাওস, ফিলিস্তিন, নেপাল, ফিলিপাইন ও তাজিকিস্তান।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, লাওস, ফিলিস্তিন, ও তাজিকিস্তান দলের ফুটবলারা সিলেটে এসে পৌঁছেছেন। টুর্নামেন্টের সিলেট পর্ব চলবে শনিবার (৬ অক্টোবর) পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায়। এরপর প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খেলা শুরু হবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আয়োজনে ও সিলেট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় টুর্নামেন্টের স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ‘কে স্পোর্টস’।
শনিবার বিকেলে সিলেট জেলা ক্রীড়া ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সদস্য,জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছয়টি দেশের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণে আগামী ১ অক্টোবর হতে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের ছয়টি খেলা সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ম্যাচে দর্শকদের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ‘কে স্পোর্টস’র পক্ষ থেকে আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হবে।
প্রতি টিকিটের মূল্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর দেড় লাখ টিকিট বিক্রি করা হবে ৬ দিনে। স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ২৫ হাজার হলেও প্রতিদিন দর্শকদের জন্য ২২ হাজার টিকিট বিক্রি করা হবে। এছাড়া তিন হাজার টিকিটি বাফুফের কর্মকর্তা জন্য রাখা হবে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের তিনটি কাউন্টারে পাওয়া যাবে এ টিকিট। টুর্নামেন্টের ভেন্যু হিসেবে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামকে মনোনীত করায় বাফুফের প্রেসিডেন্ট কাজী সালাহউদ্দিনসহ সব সম্মানিত কর্মকর্তাকে এবং টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী সব দলের সম্মানিত কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী শ্রী বীরেন শিকদার ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন।
এ আয়োজনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী সদস্য বিজিত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মো. সিরাজ উদ্দিন, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মঈন উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক দীপাল কুমার সিংহ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি নুরুল আমিন প্রমুখ।
দল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে আয়োজক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কারণ ছয় দলের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে সবার নিচে বাংলাদেশ (১৯৩)। সবার ওপরে আছে ১০০ তে অবস্থান করা ফিলিস্তিন। এর পর আসিয়ান অঞ্চলের দেশ ফিলিপাইনের অবস্থান ১১৪তে। ১২০ এ অবস্থান করছে মধ্য এশিয়ান দেশ তাজিকিস্তান। ১৫০-এর এদিকে আসরের বাকি দুই দল-নেপাল ১৬০, লাওস ১৭৯। ‘বি’ গ্রুপে স্বাগতিক বাংলাদেশের সঙ্গী ফিলিপাইন ও লাওস। ‘এ’ গ্রুপে ফিলিস্তিন, তাজিকিস্তান ও নেপাল।
বাংলাদেশের ফুটবলের সব গন্তব্য এখন আসলে সিলেট। কেননা ছয় জাতি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচই (৬ টি) সিলেটে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের শুরুতে হওয়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের খেলাও হয়েছিল সিলেটে। এর আগে বাংলাদেশ-নেপাল প্রীতি ম্যাচ হয়েছে এখানেই। সেদিন দর্শক চাপে ভেঙে পড়েছিল সিলেট স্টেডিয়ামের গেট। দুটি সেমিফাইনালের ভেন্যু নির্বাচনে চমক দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
এই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে বেছে নেওয়া হয়েছে কক্সবাজার স্টেডিয়ামকে। ৯ ও ১০ অক্টোবর সেখানেই হচ্ছে দুটি সেমিফাইনাল। ঢাকায় রাখা হয়েছে শুধু একটি ম্যাচ—ফাইনাল। ১২ অক্টোবর যেটির ভেন্যু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম।
সাফের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে বলেছিলেন, তার লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে খেলা। শক্তি ও সামর্থ্য একই রকম হওয়ায় লাওসের বিপক্ষে ম্যাচটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। এ ছাড়া এশিয়ান গেমসে কাতারের বিপক্ষে জয় এবং সাফে ভুটান ও পাকিস্তানকে হারানোয় ফুটবলপ্রেমীরা মনে করে, টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা রাখে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৬ শেষ টুর্নামেন্টে কাতার যুব দলের বিপক্ষে হেরে ফাইনাল খেলা হয়নি স্বাগতিকদের। আর ২০১৫ ফাইনালে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দুই গোল করে ম্যাচে ফিরেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।