আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশী’দের এক নম্বর শত্রু বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এরই মধ্যে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ ভারতে বসবাসকারী কথিত বাংলাদেশীদেরকে উইপোকা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ নিয়ে রাজনীতিতে এক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে। ২৫ শে সেপ্টেম্বর ‘ফিয়ার সাইকোসিস: অমিত শাহ’স এন্টি-বাংলাদেশী পিচ ওন্ট হেল্প ডমেস্টিক পলিটিক্স অর ফরেন পলিসি’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, আশা ও উন্নয়ন সহ ইতিবাচক বার্তার ওপর ভর করে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়েছে বিজেপি। আসন্ন ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতির কাছে ‘আয়ুস্মান ভারত’ স্কিম ও স্বাস্থ্য বিষয়ক স্কিম বিষয়ে বিবৃতি জাতিগোষ্ঠী অথবা সম্প্রদায়কে অতিক্রম করে গেছে। এসবই ওই একই লাইনের। বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ এরই মধ্যে অভিবাসীদেরকে অনুপ্রবেশকারী ও উইপোকা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি রাজনীতিতে আতঙ্ক ও মস্তিষ্কবিকৃতির মতো ঘটনার বিতর্ক সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
ব্যতিক্রমী বিষয় হলো, অমিত শাহ বলেছেন, কয়েক কোটি ‘অনুপ্রবেশকারী’ প্রবেশ করেছে ভারতে। আর ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিজেপি তাদের প্রত্যেককে সনাক্ত করবে। এ বিষয়ে অমিত শাহের বার বার বক্তব্য, বিবৃতি এটাই বুঝিয়ে দেয় যে, কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশী’দেরকে বিজেপি এক নম্বর শত্রু বানানোর পরিকল্পনা করছে। আর এই ইস্যুতে সব কিছু অর্জনের চেষ্টা করছে। অমিত শাহের এই নেতিবাচক কৌশলকে তুলনা করা যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চরিত্রের সঙ্গে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকানদেরকে ‘ধর্ষক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যদি এই ধারণা (বাংলাদেশী বিরোধিতা) বিজেপির নির্বাচনী সমর্থনের ভিত্তি হয় তাহলে তার ভবিষ্যত অন্য কিছু হবে না, যেমনটি হয়েছে ট্রাম্পের বর্তমান জনপ্রিয়তা কমে গেছে। শুধু এমন কৌশল নি¤œদিকেই ধাবিত করে। ২০১৯ সালে শুধু প্রকৃত ভোটই ( কোর ভোট) বিজেপির জেতার জন্য যথেষ্ট হবে না।
এ ছাড়াও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে অমিত শাহ যে তিরস্কারমুলক কথাবার্তা বলছেন তা হয়ে উঠবে এক প্রতারণাপূর্ণ কৌশল এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের ক্ষতি করবে। যদিও কোনো প্রমাণ নেই যে কয়েক কোটি কথিত অবৈধ বাংলাদেশী ভারতে বসবাস করছেন, তারপরও যদি অমিত শাহের বিবৃতিকে সত্য ধরে নেয়া হয় তাহলে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। তাহলো এসব মানুষকে নিয়ে কি করা হবে। ভারত তো চীন নয়, তাদের (বাংলাদেশী) সবাইকে নিয়ে একটি বন্দি শিবিরে খোয়ারে আটকে রাখা যাবে। এ দেশটির (ভারতের) একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান আছে। ১৯৭২ সালের পর ভারতে ব্যাপক হারে অভিবাসনের বিষয়টি যেমন স্বীকার করে না বাংলাদেশ, তেমনি ভারত যাদেরকে ফেরত পাঠাতে চায় তাদের কাউকে গ্রহণ করবে দেশটি তেমনটি বিশ্বাস করা কঠিন। এ হলো চরম এক বাস্তবতা যা থেকে দূরে সরে থাকা যায় না।
অমিত শাহের ‘উইপোকা’ মন্তব্যে এরই মধ্যে ক্রোধের সঙ্গে মনোযোগ দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে ঢাকার। ঢাকা এ ধরণের মন্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করেছে। সম্ভবত বর্তমানে প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যাদের সঙ্গে ভারতের চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান। এর কৃতিত্ব যায় ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রতি। কিন্তু বিজেপি যদি তার বাংলাদেশী বিরোধী অপবাদের প্রচারণা অব্যাহত রাখে তাহলে তাতে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগ। তাতে ভারত ও বাংলাদেশের ভবিষ্যত সম্পর্ক সন্দিহান হয়ে পড়বে। নিজেদের ভিতরে শত্রু খোঁজার অশুভ তৎপরতায় আভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা পররাষ্ট্রনীতি কোনোটির জন্যই সহায়ক নয়। এর পরিণাম হতে পারে বিজেপির জন্য আত্মঘাতী গোল।