দিনাজপুরে আ.লীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ

নিউজ ডেস্ক:: দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য ও বীরগঞ্জের দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে কেন্দ্র থেকে শোকজ করার পরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অমান্য করে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘোষণা করেছেন বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার অনুসারীরা। অপরদিকে প্রথম সারির কয়েকটি সংবাদপত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ায় দিনাজপুরের রাজনীতি যেমন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তেমনি নোংরামিও শুরু হয়েছে।

রোববার বিকেল ৩ টার দিকে বীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুটি অংশের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিভক্ত হয়ে দুইজন দুই দিকে অবস্থান নিয়েছে।

দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলায় সরকারের ১০ বছরের উন্নয়র ও সাফল্য তুলে ধরার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাস্তবায়ন পরিষদ বিকেল ৩টায় বীরগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ ডেকেছেন। সমাবেশে সভাপত্বি করবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক কালিপদ রায়।

এদিকে একই সময় একই বিষয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আহ্বান করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি আবু হুসাইন বিপু।

উভয়পক্ষই সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশ করছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগ ভীতি তৈরি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াত-শিবির কোনো ধরণের অঘটন ঘটাতে পারেন। কারণ এ এলাকায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জামায়াত-শিবির সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দিনাজপুর জেলায় কথাও জামায়াত–শিবিরের পোস্টার চোখে না পড়লেও বীরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে জামায়তের প্রার্থী মাওলানা হানিফের ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে লাগানো পোস্টার চোখে পড়ছে। যা এই এলাকার সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।

এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের সদস্য নূর ইসলাম নূর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাস্তবায়ন পরিষদ সরকারের ১০ বছরের উন্নয়ন ও সাফল্য তুলে ধরার জন্য সমাবেশ আহ্বান করেছেন। তারা দিনাজপুর-১ আসনের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপালকে প্রধান অতিথি করেছেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, সহ সভাপতি বজলুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ জামান চৌধুরী মাইকেলসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আহ্বান করার পর অনুমতি চেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রশাসনও অনুমতি দিয়েছে। এই খবর শুনে সম্পন্ন প্রতিহিংসার বসবতি হয়ে সংসদ সদস্যের বিরোধী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি আবু হুসাইন বিপু প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে একই সময় পাশাপাশি স্থানে আওয়ামী লীগ অফিসের ভেতরে সমাবেশ ডেকেছেন। যা প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃ প্রকাশ। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অমান্য করছেন। যা দলের মধ্যে শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন। তাছাড়া তাদেরকে সমাবেশের জন্য প্রশাসন কোনো অনুমতি দেয়নি।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাস্তবায়ন পরিষদ আগে সমাবেশ ডেকেছে। তাই যে কোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করা হবে।

নূর ইসলাম নূর বলেন, সমাবেশ সফল করার জন্য আমরা যেখানেই প্রচারণায় যাচ্ছি তারা খবর পেয়ে সেখানেই গিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তাছাড়া তারা কোন ব্যানারে সমাবেশ করছে তাও আমরা অবগত নই। আওয়ামী লীগের ব্যানারে এধরণের সমাবেশ করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক কালিপদ রায় বলেন, এ ঘটনা প্রতিহিংসার বহিঃ প্রকাশ। যা আওয়ামী লীগের আদর্শের পরিপন্থী।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে কেন্দ্রের পাওয়া শোকজের কথা স্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা বলেন, আজকের সমাবেশ আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি। যা দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় কার্যালয়ে সরকারের সফলতা তুলে ধরতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। এটি এমপি বিরোধী কোনো সামাবেশ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এটা এমপি বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড নয়। সরকারের সফলতা প্রচারের মাধ্যমে একটি নির্বাচনী সমাবেশ।

পাল্টাপাল্টি সমাবেশ সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতা বলেন, এ জাতীয় ঘটনার সঙ্গে অনেক আগে থেকেই আমরা পরিচিত। জাতীয় নির্বাচন এলেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বরাবরই এ কাজগুলো করে থাকেন। এর আগেও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মরহুম আব্দুর রউফ চৌধুরীর সঙ্গে একই অবস্থা হয়েছিল। সে কারণে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেছিল। এবারও আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে জামায়াত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার কোথাও জামায়াতের কোনো কর্মকাণ্ড দেখা না গেলেও বীরগঞ্জে জামায়াতের পোস্টার চোখে পড়ছে। তাই এই কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে যদি জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশ করে কিছু ঘটিয়ে ফেলে তা হলে বিচিত্র কিছু হবে না।

এ বিষয়ে বীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিলা পারভীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাস্তবায়ন পরিষদ তাদের সমাবেশ সম্পর্কে উপজেলা প্রশাসনসহ থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন। পরে অপর পক্ষের কর্মসূচির খবর জানতে পেরে যারা একই সময় সমাবেশ আহ্বান করেছেন তাদেরকে ডাকা হয়েছিল। তারা বলেছেন সমাবেশ করলে জানাবেন। তবে প্রশাসন সর্তক অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, এমপি বিরোধী সমাবেশ করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলামকে শোকজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলীয় ঐক্য, সংহতি, সস্প্রীতি, আনুগত্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যথাযথ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করেছেন কিনা স্থানীয় সংসদ সদস্য মর্নোজন শীল গোপালের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয়েছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *