উদ্বোধনের আগেই ধ্বসে পড়লো ব্রিজ

নিউজ ডেস্ক::
রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর রংপুরের দূরত্ব কমিয়ে আনতে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর উপর ‘কাকিনা-মহিপুর’ ঘাটে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর কাজ শেষ হয়েছে প্রায় বছর খানেক আগে। অপেক্ষা ছিল শুধু উদ্বোধনের।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৬ সেপ্টেম্বর এ সেতুটি উদ্বোধন করার কথা। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে সেতুর উত্তর পাশে সংযোগ সড়কের ইচলী এলাকায় ব্রিজ ধ্বসে পড়ে।

জানা গেছে, নির্মাণ ব্যয় তিন গুণ বৃদ্ধি করেও উদ্বোধনের আগেই ধ্বসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্বেশ্বর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর উপর ২০১২ সালে ১২ এপ্রিল এ সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থ্যের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুতে ১৬টি পিলার, ২টি এপার্টমেন্ট, ১৭টি স্প্যানে ৮৫টি গার্ডারের উপর সেতুটির নির্মিত। একই অর্থে সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশ্বে ১৩০০ মিটার নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর সাথে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা থেকে সেতু পর্যন্ত ৫.২৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে দুইটি প্যাকেজে ৪ কোটি ৪৬ লাখ এবং এ সড়কে ২টি ব্রীজ ও তিনটি কালভার্ট নির্মাণে ৩টি প্যাকেজে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সেতু থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা।

সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে এক কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এই ৫ কিলোমিটার সড়কে তিন দফায় তিনগুণের অধিক মোট ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যায় করেও কাজে আসছে না। ধ্বসে পড়া থেকে ব্রিজ রক্ষা করতে পুণরায় ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়।

এ সংস্কার কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কামাল অ্যাসোসিয়েট স্থানীয় প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতাদের ছায়া ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করেন।

কাজ শেষ না হতেই বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইচলী এলাকার ব্রিজের মোকা ধ্বসে পড়লে স্থানীয়রা বালুর বস্তা ফেলে পানির স্রোত রক্ষা করলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে শূন্যের মাঝে ঝুলে থাকল তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতু। নিম্নমানের কাজের কারণে উদ্বোধনের দুই দিন আগেই সেতুটি ধ্বসে পড়েছে বলে অভিযোগ।

স্থানীয়রা জানান, সংযোগ সড়ক নির্মাণের শুরু থেকে কাজের মান নিয়ে অভিযোগ করেও সুফল মেলেনি।

সেতু এলাকার কামরুজ্জামান, শরিফুল ইসলাম ও মোক্তারুল ইসলাম জানান, ‘নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে এ প্রকল্পের অর্থে ঠিকাদার দলীয় নেতাকর্মী ও প্রকৌশলীদের পকেট মোটা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতারে হুমকি দিত। নিম্নমানের কাজের কারণে উদ্বোধন হওয়ার আগেই ধ্বসে পড়েছে সংযোগ সড়ক।’

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান জানান, নদী প্রতিমুহূর্তে তার গতিপথ পরিবর্তন করে থাকে। সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা সময়ের গতিপথ অনুযায়ী সেতু ও নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এটা তার দায় নয়। উল্টো পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যথা সময়ে হবে। ধ্বসে যাওয়া অংশে দ্রুত মেরামত বা সাময়িক যোগাযোগের জন্য ব্যবস্থা করতে প্রকৌশল বিভাগ কাজ করছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *