নবীগঞ্জে সুস্থ শিশুকে অসুস্থ বানিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘটনায় তদন্ত কমিটি…

আজিজুল ইসলাম সজীব:: হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় সুস্থ শিশুকে অসুস্থ সাজিয়ে মামুন হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা এ কমিটি গঠন করেন। এবং কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন মেডিকেল অফিসার ডা. ইফতেখার হোসেন চৌধুরী ও ডা. জান্নাত আরা চৌধুরী।

উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ফুলতলী বাজার এলাকার বাসিন্দা রুবেল মিয়া ও শিরিন আক্তারের ৪০ দিন বয়সী শিশু ইসমত নাহার ঘনঘন হেঁচকি দিচ্ছিল। গত ৩১ আগস্ট সকালে শিশুটিকে নিয়ে স্থানীয় আউশকান্দি বাজারের অরবিট হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু রোগ চিকিৎসক এএইচএম খায়রুল বাশারের কাছে যান মা শিরিন আক্তার।

চিকিৎসক এএইচএম খায়রুল বাশার ৫’শ টাকা ভিজিট রেখে কিছু ওষুধ লিখে দেন এবং পরদিন শিশুর অবস্থা জানানোর পরামর্শ দেন। পরদিন শিশুটি আগের মতোই রয়েছে এ কথা জানালে চিকিৎসক খায়রুল বাশার শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান। সেই সঙ্গে দ্রুত শিশুটিকে মৌলভীবাজারের মামুন হাসপাতালে ভর্তি করে সেখানের চিকিৎসক বিশ্বজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। সেখানে গিয়ে চিকিৎসক বিশ্বজিতের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য ওই শিশুর মাকে বলেন খায়রুল বাশার।

আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকলেও শিশুর প্রাণ রক্ষায় দ্রুত মৌলভীবাজার ছুটে যান শিশুর মা শিরিন আক্তার। সেখানে যাওয়ার পর খোঁজে বের করেন চিকিৎসক বিশ্বজিতকে। পাশাপাশি শিরিন আক্তারের মোবাইলে বিশ্বজিতের সঙ্গে কথা বলেন চিকিৎসক খায়রুল বাশার। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক বিশ্বজিত মোবাইলে চিকিৎসক খায়রুল বাশারকে বলেন, শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ আছে। এরপরও সুস্থ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার জন্য বলেন চিকিৎসক খায়রুল বাশার। তার কথা অনুযায়ী রাতেই ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে।
দুই চিকিৎসকের মোবাইলে কথোপকথনের বিষয়টি দেখে শিশুর মা শিরিন আক্তারের মনে সন্দেহ জাগে। শিরিন আক্তারের মোবাইলে তখন কল রেকর্ড চালু ছিল। কিন্তু বিষয়টি জানতেন না দুই চিকিৎসক একজনও ।

পরে চিকিৎসক বিশ্বজিত ও খায়রুল বাশারের ফোনে কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। খবরটি স্থানীয় পত্রিকা হবিগঞ্জ জনতার এক্সপ্রেস প্রকাশ করা হয় আর স্বাস্থ্য বিভাগ নড়েচড়ে বসে। বিষয়টি তদন্তে অবশেষে কমিটি গঠন করে তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। অনেকে আবার মনে করছেন প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো এধরনের কু-চিত্রভানু ডাক্তারের নামে কসাই গুলো জনগণকে বিভ্রান্ত করে এধরনে দালালি শুরু করেছে। প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো এধরনের কাজ ডাক্তার সাহেবরা সবাই মিলে মিশে করে এতে তাদের নিজস্ব দালাল চক্র ও আছে। বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জ তথা সারা দেশের সাধারণ মানুষের সমালোচনার করেছেন।

জনসাধারণের মুখে কখন একি কথা হবিগঞ্জের প্রতিটি ক্লিনিক গুলো এধরনে দালালি বন্ধ করতে। এবং প্রতিটি স্তরের কর্মীদের যোগ্যতা আছে কি না তা নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন সুশীল সমাজের সবাই।

পরে সিভিল সার্জনের নির্দেশে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *