রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের চরিত্রও বুঝতে হবে: দীপু মনি

নিউজ  ডেস্ক:: রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সাফল্য পেলেও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের চরিত্র সম্পর্কে বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদ ভবনে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দীপু মনির ভাষ্য, ‘মিয়ানমারের চরিত্রটাই এমন যে, তারা সহজেই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসন করার পথ তৈরি করবে না।’

সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বা সমঝোতার প্রচেষ্টা বন্ধ করা যাবে না। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট না করে, যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখার চেষ্টা থাকতে হবে। বাংলাদেশ সরকার দ্বিপাক্ষিকভাবে যেমন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তেমনি আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক পর্যায়েও কাজ করছে।’

রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান দীপু মনি বলেন, ‘এ সংকট মোকাবিলায় সারা বিশ্ব আমাদের সঙ্গে আছে। এটি আমাদের সফল কূটনীতির ফসল।

এ ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথে এবং বিগত মাসগুলোতে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থা যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, যেভাবে তারা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, যেভাবে তারা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ঘটনাটিকে গণহত্যা, জাতিগত নিধন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেখানে আমি মনে করি, আমাদের অবশ্যই কূটনৈতিক সফলতা রয়েছে। আমরা বিশ্বকে আমাদের পাশে আনতে পেরেছি।’

মিয়ানমার রাষ্ট্রের চরিত্র সম্পর্কে এই সংসদ সদস্য (এমপি) বলেন, ‘মিয়ানমার এমন একটি রাষ্ট্র, যেটি তার নিজের জনগণের ওপর, জনগণের একাংশের ওপর, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এমন নির্যাতন চালাতে পারে, যা পৃথিবীর সকল বর্বরতার ইতিহাসকেও হার মানিয়েছে। শুধুমাত্র বিভিন্ন রাষ্ট্র তার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে বলে তারা এক বছরের মধ্যে তাদের চরিত্র পাল্টে ফেলবে, সেটি আশা করা যায় না।’

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে আসেননি উল্লেখ করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে তাদের ফিরে যাওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হবে, তারা সেখানে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ না করবেন, তাদের সেখানে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে চলতে পারার মতো ব্যবস্থা তৈরি না হবে, ন্যূনতম অধিকার নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ সেখানে স্বেচ্ছায় ফিরে যাবেন না। আর স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথও নেই।

সুতরাং এ ধরনের একটি সমস্যা, সংকট এক বছরের মধ্যেই নিরসন হয়ে যাবে, সেটি ভাবার কোনো কারণ নেই।’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *