ডিবি পুলিশ-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ, নারায়ণগঞ্জে আহত অর্ধশত, তদন্ত কমিটি

নিউজ ডেস্ক:: নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর বরফকল মাঠ সংলগ্ন চৌরঙ্গী ইকো পার্কের সামনে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে লাচ্ছি খাওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী ও ডিবি পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষে দুই দারোগাসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ডিবির এস আই মিজান ও সায়েমসহ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে। দোকানের মালিক জালাল, তার স্ত্রী রীনা, ছেলে আলামিন ও রবিনকে খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনার প্রতিবাদে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী ডিবির দোষী কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করে বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশের লাঠিচার্জের সময় পুরো পার্কের ভেতর ও বাইরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

দর্শনার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। বন্ধ হয়ে যায় পার্কের কার্যক্রমসহ নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাং রোড সড়কে যান চলাচল। ফলে দীর্ঘ যানজটের চরম দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশ প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আজ সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে পার্কের সামনে অবস্থতি ‘মাই লাইফ’ নামে একটি ফাস্টফুডে যান ডিবির এস আই মিজান ও সায়েম। লাচ্ছির কোয়ালিটি নিয়ে দোকান মালিকের ছেলের সঙ্গে তর্কে জড়ান ডিবির ওই কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে লাচ্ছির দাম না দিয়েই চলে যেতে চান। তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ডিবির দারোগারা দোকানের মালিক জালাল উদ্দিন, স্ত্রী রীনা ইয়াসমিন, ছেলে রবিন ও আলামিনকে মারধর করেন। এ ঘটনা দেখে আশপাশের দোকানদাররা এক জোট হয়ে ডিবির দুই কর্মকর্তাকে এলোপাথারি মারধর করে। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন ডিবির কর্মকর্তারা। পরে খবর পেয়ে ডিবির একটি টিম ঘটনাস্থুলে ছুটে যান এবং সংঘবন্ধ ব্যবসায়ী ও লোকজনের উপর লাঠিচার্জ শুরু করেন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী ও এলাকার বেশ কিছু যুবক সংঘবদ্ধভাবে ডিবির উপর চড়াও হয়। শুরু হয় উভয়েপক্ষের মধ্যে ধাওয়ার পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। খবর পেয়ে সদর মডেল থানার অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ফাস্টফুড দোকানের মালিক জালাল উদ্দিনের স্ত্রী রীনা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যার দিকে দুই পুলিশ সদস্য একজন নারীকে নিয়ে দোকানে আসেন। তারা লাচ্ছি, কফিসহ বিভিন্ন খাবার খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আমার ছেলে তাদের কাছ থেকে বিল চাইলে বরফ কম দেয়ার অভিযোগ তুলেন এবং নিজেদেরকে পুলিশের লোক পরিচয় বিল দিতে চাচ্ছিলেন না।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় প্রতিবাদ করলে রবিনকে থাপ্পর দেন তাদের একজন। পরে আমার স্বামী জালাল উদ্দিন ও অপর ছেলে আলামিনকেও মারধর করেন সায়েম ও মিজান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বাধা দিলে তারা দুজন আমাকেও মারধর করে।

সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নুরে আলম জানান, ডিবি পুলিশের দুই সদস্য পার্কের কাছে খাওয়া-দাওয়া করতে যান। ওই সময় কয়েকজনের সাথে তাদের তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে তারা ডিবি পুলিশের ওই দুই সদস্যকে মারধর করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারী কাউকে পাইনি। আহতদের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে জেলা পুলিশ প্রশাসন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নুরে আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোকানী বা ডিবি পুলিশ যেই দোষী হোক তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার নুরে আলম।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *