দুটি পরমাণু হামলার শিকার হয়েও বেঁচে আছেন ইনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
১৯৪৫ সালের ৯ অগস্ট। হিরোশিমা হামলার তিন দিন পরের ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমেরিকা পরমাণু হামলা চালায় নাগাসাকিতে। হিরোশিমা আর নাগাসাকি, দুই শহরেই পরমাণু বোমার শিকার হন সুতোমু ইয়ামাগুচি। দু’বারই বেঁচে গেছেন! জেনে নিন নাগাসাকির এই বাসিন্দার সম্বন্ধে-

সরকারি হিসাবে সুতোমু একমাত্র হিবাকুশা ‘অ্যাটমিক বম্ব সারভাইভার’, যিনি দুটি হামলার পরেও বেঁচে ছিলেন। হিবাকুশা ‘স্ট্যাটাস’ তিনি পান ২০০৯ সালে! হামলার কয়েক বছর পেরিয়ে ১৯৫৭ সালে জাপান সরকার থেকে একটা পাসবই পেয়েছিলেন শুধু। ৭৩ বছর আগে, ৬ অগস্ট অফিসের কাজে গিয়েছিলেন মিৎসুবিশির নাভাল ইঞ্জিনিয়ার সুতোমু ইয়ামাগুচি। কয়েক মুহূর্ত পরেই, চোখ-ধাঁধানো আলো। কান ফাটানো বিকট শব্দ। এক লাখ চল্লিশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় হামলায়। বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ। বেঁচে যান বছর উনত্রিশের সুতোমু।

১৯৪৫-এর সকালে জ্ঞান হারানোর আগে সুতোমু দেখেছিলেন, তার শরীরের বেশ খানিকটা পোড়া, বাঁ কানে কিছু শুনতে পাচ্ছেন না। যদিও তা যে পরমাণু হামলা, জানা ছিল না। রাতটা কোনও মতে কাটিয়ে, পর দিন জ্বলন্ত শব ও মৃতদেহের স্তূপ পেরিয়ে ট্রেন ধরে বাড়ি পৌঁছন তিনি। শুনলেন হামলার কথা। স্ত্রী, শিশুপুত্রের সঙ্গে দেখা হল। বললেন, ঘটনার ভয়াবহতা।

৯ অগস্ট সকালে সুতোমু হেড-অফিসে যান। সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। অফিসের বস-সহকর্মীদের কাছে ভয়াবহ ঘটনার কথা বলছিলেন। আচমকা নাগাসাকির আকাশেও সেই এক ভয়াবহ আলো! সেই কান-ফাটানো শব্দ। ফের জখম হলেন সুতোমু। ৭০ হাজার মানুষ মারা গেলেও বাঁচলেন তিনি। ছুটলেন স্ত্রী-সন্তানের কাছে। দেখলেন বেঁচে গেছেন তারাও।

বিশ্বযুদ্ধের পরের তিন বছরে তার দুই মেয়ে হয়েছিল। তারাও আজীবন অসুস্থ। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ বছর বয়সে ২০১০ সালে প্রাণ হারান তিনি। স্ত্রী, পুত্রও মারা যান ক্যান্সারে। মৃত্যুর আগে জেমস ক্যামেরনের সঙ্গে তার কথা হয়। সুতোমুকে নিয়ে ছবি বানাতে চেয়েছিলেন জেমস। ‘টোয়াইস বম্বড, টোয়াইস সার্ভাইভ্‌ড’-নামে একটা তথ্যচিত্র হয় তাকে নিয়ে। নীরব চরিত্রের এই মানুষটি ‘অ্যান্ড দ্য রিভার ফ্লোজ অ্যাজ আ র‌্যাফ্ট অব কর্পসেস’ নামে কবিতার বই লিখেছেন।

২০০৬ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জে দেখানো হয়েছিল ছবিটি, হুইলচেয়ারে-বসা সুতোমু বলেছিলেন, এই বোমা নিশ্চিহ্নকরণের কথা। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে চিঠিও দিয়েছিলেন এই নিয়ে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *