নিউজ ডেস্ক::
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তা ভিন্ন খাতে নিতে কয়েক দিন ধরেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ভয়ঙ্কর গুজব। এতে বিভ্রান্তিতে পড়ছে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। এমনকি দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তাও না বুঝে গুজবকে সমর্থন করে পোস্ট দিচ্ছেন।
এমনকি যেসব আইডি থেকে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা শেয়ার করছেন কেউ কেউ। এরই মধ্যে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সামাজিক যোগাযোগ মনিটরিং ইউনিট ছাড়াও একাধিক সংস্থা গুজব রটানোকারীদের শনাক্ত করছে। এরই মধ্যে কয়েকশ’ আইডি যাচাই-বাছাই করছেন গোয়েন্দারা। ২৯টি আইডির বিরুদ্ধে রমনা থানায় সাইবার ক্রাইম বিভাগ মামলা করেছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ আইডি বেনামে পরিচালিত হয়।
পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দেশি-বিদেশি অনেক ঘটনার পুরনো ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছে সংঘবদ্ধ কিছু গ্রুপ। দেশের বাইরে থেকেও কেউ কেউ বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছে। কৌশিক নামের এক তরুণ তার আইডি থেকে ঘোষণা দেয়- ‘মিরপুরে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হবে।’ সেখানে সবাইকে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানায় সে। কোনো আইডি থেকে গুজব ছড়ানো হয়, ‘ধানমণ্ডিতে চার ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। চারজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। কয়েক ছাত্রের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে।’ এ ধরনের গুজবের জের ধরেই শনিবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা করে।
পুলিশের এডিসি (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং) নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গুজব রটানোকারীরা নারী নির্যাতনের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় বেছে নিয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়। এতে চক্রান্তকারীরা প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তারা ছাড় পাবে না।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে উস্কে দিতে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এরই মধ্যে ১০-১২ জনকে নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে টেলিভিশন অভিনেতা ও ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতারে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি মাসুদ আহমেদ বলেন, শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নয়, অনুপ্রবেশকারীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌশলে ঢুকে পড়ে তাদের কানে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরে উস্কে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে কেউ কেউ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। এরই মধ্যে মিরপুর থেকে তানভীর হোসেন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যিনি সাভারের বেবিলন গার্মেন্টে চাকরি করতেন। পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে তিনি মিরপুরে এসে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা যাতে সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়, এমন কুমন্ত্র তিনি দেন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, গুজব বিশ্বাস করে আপত্তিকর পোস্ট দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহান দাউদ। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তার ওই ধরনের পোস্ট দেখে অনেকে বিস্মিত হন। পরে তিনি তার ফেসবুক থেকে আপত্তিকর পোস্টটি সরিয়ে নিয়ে লিখেন, ‘গত কয়েক দিনে আমার বক্তব্যগুলো পুরোপুরি স্কুলছাত্রদের দিকে সহানুভূতি ও সহমর্মিতাপ্রসূত ছিল। একে কোনোভাবেই সরকারবিরোধী বলে ভাবার সুযোগ নেই। একজন সরকারি অফিসার হিসেবে অতীতেও যেমন সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি, ভবিষ্যতেও নিজের বিবেক অনুযায়ী দেশ ও জাতির সেবা করে যাব। এর মধ্যে আমার বক্তব্যে সহকর্মীরা এবং অন্য কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আরও বিবেচনাপ্রসূতভাবে আমার বক্তব্য রাখার চেষ্টা করব, যাতে এর সুযোগে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।’
এ ব্যাপারে পরে যোগাযোগ করা হলে ফারহান দাউদ সমকালকে বলেন, ‘হিট অব দ্য মোমেন্টে পোস্ট দিয়েছিলাম। এতে আমার অন্য কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। ‘
এদিকে, আরেকটি গুজব কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তা হলো, ‘মন্ত্রী ও এমপিরা রোববার রাস্তায় ১০০০-১৫০০ বস্তির ছেলে নামাবে। যাদের কাজ হবে নারীদের নির্যাতন করা ও গাড়িতে আগুন দেওয়া।’ এই মেসেজটি সবাইকে শেয়ার করার অনুরোধ করা হয়। বিশ্বাসযোগ্য করতে গুজবের পেছনে লেখা হয়, ‘সূত্র- একজন সাংবাদিক ও মন্ত্রীর কাছের লোক।’
সতর্কতা : গুজব নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাববার বলা হচ্ছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়, ‘রাজধানীর জিগাতলায় ছাত্র হত্যা ও ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। এতে সবাইকে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশকে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে বলা হয়।