চারজনকে হত্যা-ধর্ষণের গুজবে উত্তেজিত করা হয় ছাত্রদের

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনে থাকা ছাত্রদের চারজনকে হত্যা এবং চারজন মেয়েকে ধর্ষণের কথা শুনে উত্তেজিত হওয়ার কথা জানিয়েছে ছাত্ররা।

দিনভর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় হামলার চেষ্টা, সংঘর্ষের পর ছাত্ররা জানায়, তারা নিশ্চিত সেই তথ্য ছড়ানো হয়েছিল তাদের উত্তেজিত করতে।

তবে এসব গুজব কারা ছড়িয়েছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে ফেসবুকে এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে এসব তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

এই গুজবে ধানমন্ডি ৩/এতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা হয় শিক্ষার্থীদের জমায়েত থেকে। আর গুজব ছড়ানো ইউনিফর্ম ছাড়া বেশ কিছু তরুণও সেখানে ছিল।

এ নিয়ে কয়েক ঘণ্টার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষের পর ছাত্রদের একটি দলকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর সেখান থেকে বের হয়ে জিগাতলায় বিজিবির সদরদপ্তরের সামনের রাস্তায় ছাত্র প্রতিনিধিরা অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

গত ৩০ জুলাই থেকে ছাত্রদের রাজপথে অবস্থানের সুযোগে গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ছাত্রদেরকে উত্তেজিত করার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্কুলড্রেস বিক্রির তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। অছাত্ররা ছাত্রবেশে এই সুযোগে মাঠে নেমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে বাহিনী থেকে।

এর মধ্যে শনিবার শিক্ষার্থীদের টানা ষষ্ঠ দিনের অবস্থানের মধ্যে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে জিগাতলায় চারজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে এবং চারজন মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

আর এই তথ্য শুনে সবাই একজোট হয়ে গাছের ডাল ভেঙে ছুটে আসে ধানমন্ডি ৩/এতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে। শুরু হয় সংঘর্ষ।

পরে সন্ধ্যার আগে ছাত্রদের জমায়েতে একজন বলেন, ‘একটু আগে আমরা আওয়ামী লীগে অফিস গেছি। আমাদের যেভাবে বলা হয়েছে, আমাদের চারজন বোন আটক। আমাদের প্রতিটা কক্ষ দেখানো হয়েছে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সত্যি কেউ নাই।’

এ সময় জমায়েত হওয়া ছাত্ররা ‘হো’ বলে উল্লাস করে। সেই সঙ্গে চলে হাততালি।

একজন ছাত্র বলেন, ‘একটা গুজব ছড়াইছিল।’

জমায়েত থেকে একজন ছাত্র জানতে চান, ‘টোটালি চেক করছ?’

‘টোটালি চেক হইছে।’-বলেন আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘুরে আসা ওই ছাত্র।

এক পর্যায়ে একজন বলেন, ‘ওরাও (আওয়ামী লীগ নেতারা) কথা বলছে, আমরাও কথা বলছি। তারা আমাদের সব দাবি মাইন্যা নিছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব দাবি মাইন্যা নিছে।’

তুর্য বলবে, এমন ঘোষণা দেয়ার পর এই ছাত্র বলেন, ‘আমরা যেয়ে প্রেস কনফারেন্সে (আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন) বইল্যা আসছি, এইটা একটা অরাজনৈতিক কার্যক্রম, এটা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিপক্ষেও না, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিপক্ষেও না।’

ছাত্ররা তখনও ‘হো’ বলে উল্লাস করে।

তুর্য বলতে থাকেন, ‘আমরা শুধু আমাদের যে নয়টা দাবি, লক্ষ কোটি ছাত্রদের যে নয়টা দাবি, ওই নয়টা দাবির জন্য গেছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন এবং এটার প্রসেস চলতেছে।’

‘হো’ বলে উল্লাস চলে তখনও।

আরেকজন বলেন, ‘আমাদেরকে বলা হয়েছে, আরেকটা কথা যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, চারটা মেয়েকে আটকানো হয়েছে, মেয়েদেরকে ঘরের ভেতর আটকে রেখেছে, সেটা সম্পূর্ণ গুজব।’

‘আমরা ভিতরে গিয়া দেইখ্যা, আসছি, নিজ চোখে দেইখ্যা আসছি।’

তুর্য বলেন, ‘গুজব ছড়াইছে যে একটা মেয়েকে ধইরা নিয়া গেছে। আমরা তাদের কনফেস (স্বীকারোক্তি) করছি যে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে।’

এর আগে সাংবাদিকদেরকে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কাজী হাসিবুর রহমান তুর্য বলেন, ‘দুপুর ১১টা থেকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে আমরা অবস্থান নেই। আমরা স্লোগান দিচ্ছিলাম। জোহরের নামাজের পর একদল লোক এসে আমাদের জানায়, জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করছে। সে কথা শুনে ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে যাই। তবে আমরা অবস্থান ছাড়িনি।’

‘বিচ্ছিন্নভাবে কে কারা হয়তো আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে গেছে এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *