নিউজ ডেস্ক:: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম থেকে আমরা যে অভিযোগগুলো করছিলাম আজ তিন সিটিতে সেটিরই নগ্ন বহি:প্রকাশ ঘটছে।
তিনি বলেন,‘আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের জন্যই সরকার তিন সিটির ভোট নিয়ে অনাচারের লিপ্ত হতে পেরেছে। নির্বাচন কমিশন উচিৎ-অনুচিতের এথিক্সের ধার ধারেনি বলেই নির্বিকার থাকছে এবং নৌকার প্রার্থীকে ভোট ডাকাতিতে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের অসংখ্য অনিয়ম ও নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ কমিশন কানে তোলেনি। কমিশন মুক ও বধির হয়ে গেছে। অবৈধ সরকার ও মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন অনিবার্য সম্বন্ধসূত্রে গাথা’।
সোমবার (৩০ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন,‘বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এরা কখনোই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেবে না। কেন্দ্র দখল, বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়া, জালভোটে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করার ‘হাসিনা মার্কা’ নির্বাচনকেই বাংলাদেশের নির্বাচনের মানদণ্ড করা হয়েছে। শেখ হাসিনা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিনই এই মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন হবে’।
তিনি বলেন,‘ক্ষমতাসীনরা অহংকার আর উন্মত্ততায় বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ক্ষমতামায়ায় হিংস্র হয়ে নির্বাচনী বিজয় জোর করে ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছে। আর আত্মাবিক্রিকারি নির্বাচন কমিশন ভোট শেষে অনুশোচনাহীন চরম মিথ্যাচার করে বিবৃতি দিবে। অবৈধ সরকারকে খুশি করতে নির্বাচন কমিশন নিজেদের স্বাধীন ক্ষমতাকে নিজেরাই হরণ করেছে। নির্বাচন কমিশন এখন একটি প্যারাসাইট। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিপক্ষ’।
তিন সিটি নির্বাচনের নানা অনিনয়ম চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন,‘রাজশাহীতে ওসি কামাল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মিজানুর রহমান মিনুকে ধাক্কাধাক্কি করে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু এবং মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলনকেও ওসি কামাল ধাক্কা মেরে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে।
দাসমারীতে ধানের শীষের সমর্থক বজলুর রহমান মন্টু, রাজীব হোসেন, সাইফুর রহমান ডিকেন এবং আব্দুল আউয়ালকে মেরে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী ক্যাডার’রা। প্রায় সকল কেন্দ্র থেকেই ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা’।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে হাজার হাজার লোক আনা হয়েছে।
গতকাল আওয়ামী লীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও নাটোরের এমপি শিমুল রাজশাহী শহরে অবস্থান করেছেন। রাজশাহীতে ২৮ জুলাই মধ্যরাত থেকে সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, বাড়িতে বাড়িতে হানা ও হুমকি অব্যাহত আছে। পুরুষদের না পেলে মেয়েদের থানায় নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে। রাজশাহী বিএনপির ধানের শীষের ২৪ জন এজেন্ট নিখোঁজ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।গুলজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কেন্দ্রে মহিলা এজেন্টদের কাউকেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি’।
তিনি বলেন,‘বরিশালে মজিদুন নেসা ভোট কেন্দ্র এবং বরিশাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের ব্যাজ লাগিয়ে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট’রা কাজ করছে। ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সারোয়ারকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ছাত্রলীগ ও পুলিশ প্রশাসনের নেতৃত্বে ধানের শীষের সব এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ১৫ নং ওয়ার্ডে ধানের শীষের এজেন্ট আলমাস ও সুমনকে মারধর করে আহত করা হয়েছে, তারা দু’জনেই এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন’।
সিলেট সিটি নির্বাচনে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন,‘২০ নং ওয়ার্ডের এমসি কলেজ কেন্দ্রে সকাল ৮.৪৫ মিনিটে দিপক রায়, টিটন মলি-কসহ ধানের শীষের প্রার্থীর সকল এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। ২১ নং ওয়ার্ডের চান্দুশাহ ভোটকেন্দ্র সকাল ৮.৪০ মিনিট থেকে ধানের শীষ প্রার্থীর সমর্থিত সকল এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। আলমগীরসহ সবাইকে। ২০ নং ওয়ার্ডর হাতিম আলী হাইস্কুল কেন্দ্র ৮.৪৫ মিনিট থেকে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্ট রোজেল আহমেদ চৌধুরীসহ সকলকে বের করে দিয়েছে’।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম,আবুল খায়ের ভূইয়া,খায়রুল কবির খোকন,আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।