বিশ্বের চোখ এখন হেলসিংকিকের দিকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: গোটা বিশ্বের চোখ আজ ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিকে থাকবে। কেননা এই শহরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক।

দীর্ঘ দুই যুগ পর আবারো বৈঠকে বসছেন এই দুই দেশের প্রধানরা। এর আগে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়েলেসিনের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

আজকের বৈঠক নিয়ে আশার পারদ তুঙ্গে থাকলেও ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছে দিয়েছেন, এতে অবাস্তব কোনো ফল আসবে না।

তিনি বলেন, ‘পুতিনের সঙ্গে সোমবারের বৈঠক থেকে খুব বেশি কিছু আশা করার কিছু নেই। এ থেকে ‘খারাপ কিছু’ নয় হয়তো ‘ভালো কোনো কিছু’ বেরিয়ে আসতে পারে। তবে সিরিয়া আর ইউক্রেন নিয়ে কথা হবে। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়েও কথা বলবো আমি’।

হেলসিংকিতে ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক সামনে রেখে তাদের মিত্র ও প্রতিপক্ষরা নিজেদের কৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত। সেখানে বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থ বিভিন্ন রকম। আঞ্চলিক পর্যায়ে এমন ধারণা চালু রয়েছে যে, সিরিয়া নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের স্পষ্ট কোন নীতি নেই। সে কারণে পুতিনের কাছে ট্রাম্প কি পরিকল্পনা তুলে ধরবেন সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে এবং মার্কিন মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের বিতাড়িত করার জন্য ইরান ও রাশিয়া একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ট্রাম্প এখন সিরিয়ায় তার দেশের সহযোগিতার বিনিময় কি দাবি করেন তা স্পষ্ট নয়।

তিনি ইরানকে সিরিয়া থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দিতেও পারেন। এছাড়া তিনি সিরিয়া থেকে আংশিক অথবা পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিতে পারেন। এটি সিরিয়া, রাশিয়া ও ইরানেরও দাবি যে সিরিয়ার ভূখ- থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হোক।

এছাড়া ট্রাম্প রাশিয়ার ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল মেনে নিয়ে দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দিতে পারেন। বারাক ওবামার সময় রাশিয়ার ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।

ট্রাম্প বুধবার ন্যাটোর যে ঘোষণাপত্রে সই করেন তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ার অন্যায় ও অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখল কখনও মেনে নেয়া হবে না।’ এখন যদি ট্রাম্প রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল মেনে নেন তবে সেটি হবে ২৮ জাতি জোটটির প্রতি তার সরাসরি চপেটাঘাত। এমন এক সময় এ কাজ করা হবে যখন ন্যাটোর ঐক্য ও ভারসাম্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

তবে এসব কিছুর চেয়ে ট্রাম্প সিরিয়া থেকে ২ হাজার ২শ’ সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন, যেটি সবচেয়ে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব হতে পারে। ট্রাম্প চলতি বছর আরও আগের দিকে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শীঘ্রই সিরিয়া থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করবে।

তার ওই ঘোষণা ওয়াশিংটনের সামরিক মিত্র যেমন তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন যে, এখনই সৈন্য প্রত্যাহার হচ্ছে না।

সিরিয়া প্রতিবেশী আরব দেশগুলো ও ইসরাইলের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন সিরিয়া থেকে এখনই সব মার্কিন সৈন্য ফিরিয়ে নেয়াটা হবে বিপর্যয়কর। কারণ এতে করে সেখানে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হতে পারে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের বিভিন্ন ছিটমহল যেভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তার ফলে ট্রাম্প প্রশাসন এখন সিরিয়া থেকে সরে আসার কথা ভেবে থাকতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *