চিকিৎসার নাম ঝাঁটাপেটা

নিউজ ডেস্ক:: পিপুল মিয়া। জামালপুরের বকশীগঞ্জ তার বাড়ি। দুই সন্তানের জনক পিপুল মিয়া ভ্যানগাড়ি দিয়ে ফেরি করে মুদির দোকান করতেন। অভাবী সংসারে কোটিপতি হওয়ার নেশা চেপে বসে তার। তিনি নিজ বাড়িতে পীরের আস্তানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা আঁটেন। হঠাৎ এক সকালে লোকজন দেখতে পান পিপলু মিয়ার বাড়ি লাল কাপড়ে ঘেরা। ভিতরে জ্বলছে আগরবাতি, মোমবাতি। পিপুল মিয়া সেই আস্তানার পীর। পাগড়ি পরা। লোকজন তাকে ঘিরে আছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে এ পাড়া থেকে ও পাড়া। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। শুরু হয় নানা জটিল রোগের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। কিন্তু এলাকার লোকজন এক সময় ক্ষেপে যায়। তার ওপর হামলা চালায়। ভণ্ডামির কারণে মদনেরচর গ্রামের লোকজন গণধোলাই দিয়ে এলাকা থেকে ভণ্ডপীর পিপুল মিয়াকে বিতাড়িত করে দেয়।

গণধোলাইয়ের পর নিজ গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলার উজান কলকীহারা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন পিপুল মিয়া। আস্তানা গাড়লেন। শুরু হলো তার অপচিকিৎসা। পীরের অপচিকিৎসায় প্রতারিত হতে শুরু করে এলাকার সহজ সরল হাজার হাজার মানুষ। সব রোগের মহৌষধ কথিত ভণ্ডপীর পিপুল মিয়া তার নিজের এই চিকিৎসার নাম দেন ‘ঝাঁটাপেটা চিকিৎসা’। ঝাঁটাপেটা খেয়েই সব রোগ সেরে যাচ্ছে এমন প্রচার করছে বকশীগঞ্জ উপজেলার উজান কলকীহারা গ্রামের কথিত ভণ্ডপীর পিপুল মিয়া ও তার দালালরা। এই দালাল চক্রের অপপ্রচারের কারণেই প্রতিদিন হাজার হাজার নিরীহ মানুষ চিকিৎসার নামে প্রতারণার শিকার হয়ে আসছে। শ্বশুরবাড়ির এলাকায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠা করে ভণ্ডপীরের আস্তানা। এই আস্তানার স্বঘোষিত পীর পিপুল মিয়া।

এরপর থেকেই তার দালালরা চিকিৎসার বিষয়ে নানা অপপ্রচার করতে থাকে। ভণ্ডপীর পিপুল মিয়ার চিকিৎসার মহৌষধ হলো রোগীর কপালে ঝাঁটাপেটা ও তেলপড়া। দালাল চক্রের এসব নানা গুজবে উজান কলকীহারা গ্রামে প্রতিদিন শিশু ও নারী পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণির হাজার হাজার রোগীর ভিড় জমতে থাকে।ঝাঁটাপেটা ও তেলপড়ার জন্য প্রতিদিন ভোর বেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে কলকীহারা গ্রামে। চলতে থাকে টাকার খেলা।

বিগত এক মাসে ইসলামপুরের সোলাইমান, শ্রীবরদীর হালিমা, কাকিলাকুড়ার আফসার আলী, ঝিনাইগাতীর ফুলু মিয়া, নালিতাবাড়ীর ফাতেমা বেগমসহ পিপুল মিয়ার আস্তানায় প্রায় লক্ষাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এসব রোগীর কাছে ভণ্ডপীরের দালাল চক্র প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ যাবত পর্যন্ত কোনো রোগীই আরোগ্য লাভের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *