কেমুসাসের ১০০০ তম সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত

অত্যন্ত আনন্দঘন এবং উৎসবমুখর পরিবেশে এবং সিলেটের কবি-সাহিত্যিকদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে সম্পন্ন হল দেশের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ১০০০তম সাহিত্য আসর। বর্ণাঢ্য এই আসরে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লেখক-কবি-ছড়াকার-শিল্পীরা এসে যোগ দেন । গত বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই ) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নগরীর দরগাহ গেইটস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসর কক্ষে অনুষ্ঠিত ১০০০তম সাপ্তাহিক সাহিত্য আসরে সভাপতিত্ব করেন সংসদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি।

আসরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য একটি লগো উন্মোচন করা হয়। লগো উন্মোচন করেন সংসদের সহ সভাপতি আ ন ম শফিকুল হক। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সাহিত্য চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। মানুষের মধ্যকার সাহিত্য প্রতিভাকে বিকশিত করার জন্য সাহিত্য আসর এক সোনালী অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। আজকের এই ১০০০তম সাহিত্য আসর এরই ধারাবাহিকতায় ইতিহাসে এক মূল্যবান সংযোজন। যারা শুরু থেকে সংসদকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেছেন এবং বর্তমানে করছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা। তিনি ১০০০ তম সাহিত্য আসর উপলক্ষে রবীন্দ্র-নজরুল উৎসব এবং তরুণ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের তারিখ শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে জানান ।

সাহিত্য সংসদের সহ সভাপতি গল্পকার সেলিম আউয়ালের সঞ্চালনায় আসরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংসদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেওয়ান এ এইচ এম মাহমুদ রাজা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ, সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গবেষক আবদুল হামিদ মানিক, সংসদের সহ সভাপতি শিক্ষাবিদ লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, সহ সাধারণ সম্পাদক লেখক সৈয়দ মবনু, সংসদের কার্যকরী পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সংসদের কোষাধ্যক্ষ এডভোকেট আবদুস সাদেক লিপন, পাঠাগার সম্পাদক আহমদ মাহবুব ফেরদৌস, কার্যকরী পরিষদ সদস্য কবি মুহিত চৌধুরী, প্রাবন্ধিক জাহেদুর রহমান চৌধুরী, লেখক ফজলুল করিম আজাদ, সাংবাদিক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক কবি নাজমুল আনসারী।

আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ইনাম চৌধুরী, বিশিষ্ট নগর গবেষক মোঃ ফজলুল হোসেন মীনা, কলামিস্ট বেলাল আহমদ চৌধুরী, কবি সাঈদ চৌধুরী, সাহিত্য আসরের নিয়মিত আলোচক অধ্যাপক কবি বাছিত ইবনে হাবীব, ছড়া পরিষদের সহসভাপতি অজিত রায় ভজন,আবৃত্তি সংগঠন মুক্তাক্ষরের পরিচালক বিমল কর,আসরের আলোচক কবি মামুন সুলতান,সিলেট লেখিকা সংঘের সাধারণ সম্পাদক কবি মাসুদা সিদ্দিকা রুহী,নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের সাধারণ সম্পাদক কবি হোসনে আরা কলি, সিলেট লেখিকা সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক কবি ইশরাক জাহান জেলী, সাহিত্য আসরের আলোচক ছড়াকার কামরুল আলম।
স্বাগত বক্তব্যে সংসদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেওয়ান এ এইচ এম মাহমুদ রাজা চৌধুরী বলেন, কেমুসাস তার যাত্রা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধেও কেমুসাসের ভূমিকা রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাহিত্য চর্চার প্রসারে কেমুসাসের আজকের এই ১০০০ তম সাহিত্য আসর নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছে। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম সাহিত্য চর্চায় আরো বেশি উৎসাহিত হবে। কবি কালাম আজাদ বলেন,মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেটের ঐতিহ্য । ১০০০ তম আসর লেখকদের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষায় ভূমিকা রাখবে । আমি আশাকরি,তরুণ লেখকরা সাহিত্যের সঙ্গে আজীবনের সম্পর্ক রাখবেন । গবেষক আবদুল হামিদ মানিক বলেন,সাহিত্য সম্পাদক সত্যিই ভাগ্যবান যে, তার সময়ে ১০০০তম সাহিত্য আসর হচ্ছে । সাহিত্য সংসদ সৃজনশীল সত্তার বিকাশে কাজ করছে । যারা সাহিত্য চর্চা করে না,ছড়া-কবিতা লিখে না,তারাই অন্যের বুকে ছুরি চালায় । কবি সৈয়দ আলী আহমদ বলেন,সাহিত্য আসরে এসে তরুণ লেখকরা লেখালেখির দিক নির্দেশনা পায় । সাহিত্য সংসদ হচ্ছে লেখকদের অভয়াশ্রম । এই আশ্রম টিকে থাক,এই আমার নিয়ত কামনা ।

মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন,সিলেট অঞ্চলে সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অবদান অনেক । আজকের এই ১০০০ তম আসরের উৎসাহ-উদ্দীপনা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলে আমার বিশ্বাস ।

সাহিত্য আসরে লেখাপাঠে অংশ নেন সুফিয়া জমির ডেইজী , দেলোয়ার হোসেন দিলু ,চন্দ্রশেখর দেব, মোঃ শওকত আলী, কুবাদ বখত চৌধুরী রুবেল, সিরাজুল হক, এম শহিদুজ্জামান চৌধুরী, এম আশরাফ আলী, নাঈমা চৌধুরী, আলেয়া রহমান, এম এ হান্নান, এখলাসুর রাহমান, বিনতা দেবী, মোহাম্মদ বাদশা গাজী, ফায়যুর রাহমান, বাশিরুল আমিন, মামুন হোসেন বিলাল, মিনহাজ ফয়সল, শামসীর হারুনুর রশীদ,জান্নাতুল শুভ্রা মনি, তপন মজুমদার, আহমাদ শামসুদ্দীন, আব্দুস শহিদ, সৈয়দা মুক্তদা হামিদ, আয়েশা মুন্নি, আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্না, নজমুল হক চৌধুরী, মোঃ শাহিন উদ্দিন, মোঃ আলমগীর চৌধুরী, এডভোকেট শাহ আলম মহিউদ্দিন, এজে এম শিহাব, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মো. আব্দুল বাছিত, আব্দুল কাদির জীবন, আকলিমা খানম আমিনা, মাহফুজ জোহা, এডভোকেট এম শামীম আহমদ, মোঃ নাসির উদ্দিন, এম আলী হোসাইন চৌধুরী, আকরাম সাবিত, সুলায়মান আল মাহমুদ, শাহ সরোয়ার আলী, শাহানারা বেগম ইমা, রেজাউল করিম, নাঈমুর ইসলাম গুলজার, মোঃ দিদার, সাদিক শামসুল, আহমাদ সালেহ, সাজন আহমদ সাজু, আজরফ মনি, শামছুল হুদা সোয়েব, মিছবাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, জালাল জয়, এম এইচ এ কিউ কামরুল , মোঃ খালেদ সৌরভ, দিলওয়ার হাসান রাসেল, জাহাঙ্গীর হোসাইন চৌধুরী, মোস্তফা কামাল, মাহমুদ শিকদার, মুহিবা ইসলাম মৌরি, মুয়াজ বিন এনাম, মোঃ আব্দুল্লাহ, আখলাক হুসাইন, হাসান মাহমুদ, ইমরান ইমন, শাহজাহান শাহেদ, লিপি খান, সৈয়দা মনাক্কা নাছিম, সারাহ সানজিদা, শাহিন আলম সৌর, জাকির হোসেন, আহমেদ জাকির বিন আলিম, এম এ আসাদ চৌধুরী, কাজী আল মামুন, ফতহুল করিম হাসান, শাহেদ শাহরিয়ার, মুতিউল মুরসালিন, ফয়জুল হাসান, হাজী মোঃ ইকবাল উদ্দিন, স্বর্ণালী খানম। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কবি কামাল আহমদ। অনুভূতি ব্যক্ত করেন সাহিত্য আসরের নিয়মিত উপস্থাপক গল্পকার তাসলিমা খানম বীথি ও গল্পকার রাফিদ চৌধুরী । গান পরিবেশন করেন মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন দাদন, মোঃ বাহাউদ্দিন বাহার, ওবায়দুল হক মুন্সী ।

সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি বলেন, আজকের এই ১০০০তম সাহিত্য আসরে কবি-সাহিত্যিকদের প্রাণবন্ত এবং স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। এর ফলে সাহিত্যচর্চায় দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে গেল। আশাকরি, ভবিষ্যতেও সাহিত্য আসর এবং আল-ইসলাহ এর অগ্রযাত্রায় লেখকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। তিনি সাবেক সকল সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদকদের অবদানের কথা স্মরণ করে সিলেটের সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ-এর নেতৃত্বাধীন বর্তমান কার্যকরী কমিটির সকল সদস্যের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *