নিউজ ডেস্ক:: দেশে সস্তা ফোনের নামে চলছে ভয়াবহ ডিজিটাল প্রতারণা। বৈধ পথে আমদানি না হওয়া বেনামি ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ বেশি।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় সঠিক মান যাচাই ছাড়াই বাজারে বিক্রি হওয়া এসব হ্যান্ডসেট কিনে ঠকছেন ক্রেতারা একইসঙ্গে বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র কড়া নজরদারীর দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।
হ্যান্ডসেটের ডিজিটাল প্রতারণার শিকার রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মনির হোসাইন জানান, বিক্রমপুর প্লাজার একটি দোকান থেকে হটওয়েভ ব্র্যান্ডের আর৯ মডেলের একটি হ্যান্ডসেট কিনেন তিনি। কেনার পর থেকেই সেটটি তার পুরোনো সেটের চেয়েও ধীর গতিতে কাজ করায় তিনি বিষয়টি তার এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করেন।
তার পরামর্শ অনুযায়ী ফোনটি একটি ল্যাবে নিয়ে টেস্ট করে তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন। ল্যাব প্রতিবেদন হাতে পেয়ে তিনি সেটের মোড়কে মুদ্রিত স্পেকের সঙ্গে ফোনটির অরিজিনাল স্পেকের মধ্যে গড়মিল রয়েছে। প্যাকেটে প্রসেসর ১.৩ গিগা হার্ডজ লেখা থাকলেও এতে রয়েছে ১.২ গিগা; র্যাম ২জিবির পরিবর্তে আছে ৫১২ এমবি, রম ১৬ জিবির বদলে পাওয়া গেছে ২ জিবি।
প্রতারণার শিকার সবুজবাগ থানার অধিবাসী একটি মোবইল কোম্পানিতে চাকরিরত হাসিবুর রহমানও জানান তিনিও রাজধানীর মোতালেব প্লাজা থেকে বাইটুএনথ্রি৬০ মডেলের হ্যান্ডসেট কিনে এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি তার ফোনটি দেশের একটি নামকরা ব্র্যান্ডের মোবাইল ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেটটির প্যাকেটে ৫ মেগা পিক্সেল লেখা থাকলেও সেখোনে মূলত ১.৯ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা এবং ৩২০০ এমএএইচ এর বদলে ১৯৫৮ এমএএইচ ব্যাটারি দেয়া হয়েছে।
আল আমিন ও হাসিবের মতো এমন অনেক ক্রেতাই প্রতিনিয়ত মোবাইল হ্যান্ডসেটের এই ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
এই প্রতারণা বিষয়ে কার কাছে অভিযোগ করবেন বা কীভাবে পরিত্রাণ পাবেন সে বিষয়টি স্পষ্ট ধারণা থাকায় শেষ পর্যন্ত তারা এই ক্ষতিকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ এবং প্রাপ্ত স্পেক টেস্টিং প্রতিবেদন হাতে পেয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার মেসার্স আনিরা ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ হটওয়েভ ব্র্যন্ডের এবং সাহাবা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল বাইটু ব্র্যান্ডের আমদানিকারক।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাবে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী প্রকাশ্যেই এমন ডিজিটাল প্রতারণা করছেন।
স্পেক প্রতারণা করে প্রচলিত ব্র্যান্ডের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রির অফার দিয়ে তারা অনলাইন-অফলইনে এবং এজেন্টদের মাধ্যেও রমরমা ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মোবাইল ইম্পোর্টার্স অ্যসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, অভিযুক্ত আমদানি কারক বর্তমানে আমাদের সক্রিয় সদস্য নয়।
তাই আমরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তবে এ ধরণের প্রতারণা যেন না হয় সে জন্য অ্যাসোসিয়েশন সবসময় সোচ্চার থেকেছে।
সংগঠন বা কমিউনিটির বাইরে থেকে যারা এই ব্যবসায় করছেন তারাই মূলত এ ধরনের অপকর্ম করছেন। এতে প্রতিশ্রুতিশীল ক্রেতা ও সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আমরা মনে করি, সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারণ ও তা যাচাই পূর্বক তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদান বাধ্যতামূলক করে অবৈধ পথে দেশে মোবাইলফোন আমদানি রুদ্ধ করা না গেলে এ পরিত্রাণ দুরুহ।
বাংলাদেশ মোবাইল ইম্পোর্টার্স অ্যসোসিয়েশন বলছে, আমরা আশা করবো সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ক্রেতাদের এই ডিজিটাল প্রতারণা থেকে রক্ষা করবেন।