নিউজ ডেস্ক:: দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোর নিবন্ধন দিতে প্রায় তিন বছর আগে আবেদন আহ্বান করে সরকার। নিবন্ধন পেতে দুই হাজারেরও বেশি অনলাইন সংবাদমাধ্যম আবেদন করে। কিন্তু এখন কোনো ধরনের আইন ছাড়া অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোর নিবন্ধন দিতে রাজি নয় তথ্য মন্ত্রণালয়।
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আবেদন আহ্বানের পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অধিদফতরে দুই হাজার ১০৮টি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের আবেদন জমা পড়েছে। গত বছর চূড়ান্ত হওয়া অনলাইন নীতিমালায় এসব সংবাদমাধ্যম নিবন্ধনে সম্প্রচার কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে সম্প্রচার কমিশন গঠনের ‘জাতীয় সম্প্রচার কমিশন আইন’-এর কোনো খবর নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রচার কমিশন আইন ছাড়া আপাতত অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোর নিবন্ধন দেওয়ার কোনো ভাবনা নেই সরকারের। আইনটি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে, তবে তা খুবই ধীরগতিতে। তাই নিবন্ধন দেওয়ার কাজটি এখন বলতে গেলে অনেকটাই স্থবির।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিবন্ধনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এখনো দেরি আছে। আমরা প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করছি। সম্প্রচার আইন হবে, সম্প্রচার কমিশন হবে। এর সঙ্গে মিলিয়েই আমরা পদক্ষেপ নেব। যারা আবেদন করেছেন তাদের নিবন্ধন দেওয়ার কোনো প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। আমরা পিআইডির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছি। যাচাই-বাছাই চলছে, সময় লাগবে।’
‘আনুষ্ঠানিক আইন ছাড়া তো আমি নিবন্ধন দেবো না। তারা এখন কাজ করছে, করুক। অনলাইন সংবাদমাধ্যমের নীতিমালা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধনের কোনো বিধি তৈরি হয়নি। প্রাক-নিবন্ধনের কাজ চলছে। প্রাক-নিবন্ধন শেষ করেই নিবন্ধনে যাব’, বলেন ইনু।
তাহলে সম্প্রচার কমিশন গঠিত হওয়ার আগে সরকার নিবন্ধন দেবে না- এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি যদি ওটার বিলম্ব হয় তবে আগেই আমরা (তথ্য মন্ত্রণালয়) দিতে পারি। তবে সেই কাজ আমরা শুরু করিনি। যখন নিবন্ধন দেওয়া হবে, অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো কী কী সুবিধা পেতে পারে তখনই সেগুলো নির্ধারিত হবে।’
২০১৪ সালের ৪ আগস্ট ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, ২০১৪’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। নীতিমালার গেজেট জারি করা হয় ৬ আগস্ট। নীতিমালায় একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়। একই সঙ্গে এতে সম্প্রচার আইন প্রণয়নের দিকনির্দেশনা রয়েছে।
পরে ২০১৭ সালের ১৯ জুন ‘জাতীয় অনলাইন নীতিমালা, ২০১৭’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ৫ জুলাই নীতিমালার গেজেট জারি করা হয়। নীতিমালায় বলা হয়, ‘সকল অনলাইন গণমাধ্যমকে সম্প্রচার কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ করে অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধিত করবে।’
নীতিমালায় আরও বলা হয়, ‘বিদ্যমান অনলাইন গণমাধ্যমগুলো শর্তপূরণ সাপেক্ষে নিবন্ধিত হবে। সকল অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, আর্থিক সঙ্গতি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বাস্তবায়নসহ একক নামসংক্রান্ত বিধিবিধান মেনে নিবন্ধিত হতে হবে। সরকার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নিবন্ধন দিতে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করবে। এতে নিবন্ধন প্রদান পদ্ধতি, যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, বাতিল ও অগ্রায়নের বিধান বর্ণিত থাকবে।’
কিন্তু ২০১৬ সালে সম্প্রচার কমিশন গঠনের বিধান রেখে জাতীয় সম্প্রচার কমিশন আইনের খসড়া হলেও খসড়াটি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তির পর এটি আর এগোয়নি।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ক্রমবিকাশমান অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও এর ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারের ধারণা স্পষ্ট নয়। তাই শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। এত অনলাইনের ব্যবস্থাপনা বা নিবন্ধন দেওয়ার মতো সামর্থ্য তথ্য মন্ত্রণালয় বা তথ্য অধিদফতরের নেই। আইন ছাড়া নিবন্ধন দিলে ভবিষ্যতে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই তথ্য মন্ত্রণালয় খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর এক তথ্য বিবরণীতে তথ্য অধিদফতর জানায়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত ও অপসাংবাদিকতা রোধে অনলাইন পত্রিকাগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। এ জন্য নির্ধারিত নিবন্ধন ফরম ও প্রত্যয়নপত্র বা হলফনামা পূরণ করে তথ্য অধিদফতরে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন-সংক্রান্ত আবেদন জমা দেওয়ার পর এগুলো যাচাই-বাছাই ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সন্তোষজনক রিপোর্ট পাওয়ার পর তথ্য অধিদফতর চিঠির মাধ্যমে নিবন্ধনের বিষয়ে আবেদনকারীদের জানিয়ে দেবে।
চলমান সব অনলাইন পত্রিকাগুলোকে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। এরপর সময় আরও কয়েক দফা বাড়ানো হয়।
তথ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ১১৬টি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে ২৫১টি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। দেশে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার ১৪৭ জন।