বিদ্যুৎ বিলে গ্রাহক হয়রানি: অভিযোগ করে জিতলেন সোয়া লাখ টাকা!

নিউজ ডেস্ক:: গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিপিডিসি) ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকার ২৫ শতাংশ পাবেন অভিযোগকারী।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর গতকাল রোববার এক শুনানি শেষে ডিপিডিসিকে এই জরিমানা করে। আজ সোমবার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফরোজা রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ডিপিডিসির বিরুদ্ধে দুইজন গ্রাহকের করা কারচুপি, হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করে মোট পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ার ডিপিডিসির গ্রাহক মো. রনি ইসলাম ২০১৫ সালে ১২ মাসের
বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। ২০১৬ সালের ১৮ মে একটি প্রত্যয়নপত্র দেয় ডিপিডিসি। যেখানে লেখা ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ। কিন্তু ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডিপিডিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৫ সালের এপ্রিল ও আগস্ট দুই মাসে তিন হাজার ৭৭২ ইউনিট বিল পরিশোধ হয়নি যার মূল্য ৩৮ হাজার ৮১৮ টাকা। বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎলাইন কেটে দেয়া হবে। ডিপিডিসির অফিসে বিষয়টি জানানোর পরও কোনো সুরাহ হয়নি।

অপরদিকে ডিপিডিসির বিরুদ্ধে কারচুপি করে গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগ করেন রামপুরা বনশ্রী এলাকার একজন। অভিযোগে তিনি বলেন, আমার বাসায় মাসে গড়ে ১০০ থেকে ১৩০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়; যেখানে বিলবাবদ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু গত বছর জুলাই মাসে জিরো (শূন্য) ইউনিট দেখিয়ে ১২১ টাকা বিল করে। তার পরবর্তী মাস আগস্টে মিটার রিডিং না দেখেই ৩৬৫ ইউনিটের দুই হাজার ৫৮ টাকা বিল করা হয়। এছাড়া প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য পাঁচ টাকা ১৩ পয়সা হলেও জুলাই ও আগস্ট মাসে ডিপিডিসি কারচুপি করে নিয়েছে পাঁচ টাকা ৬৫ পয়সা।

অধিদফতরের শুনানিতে ডিপিডিসির বিরুদ্ধে করা এ অভিযোগটি প্রমাণ হওয়ায় আরও আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, যে কোনো ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকারবিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন। দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই ফরমে লিখিত হতে হবে। ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে; বা অন্য কোন উপায়ে; অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে। অভিযোগকারী তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন।

পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে সাতদিনের মধ্যে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে তদন্ত করে জেল জরিমানা করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আর জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ নগদ দেয়া হবে অভিযোগকারী ভোক্তাকে।

সহকারী পরিচালক আফরোজা রহমান বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকারের ঘোষণা অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ পাবেন অভিযোগকারীরা। সে হিসেবে ওই দুইজন অভিযোগকারী ৬২ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পাবেন।অভিযুক্ত কোম্পানির কাছ থেকে জরিমানার টাকা আদায়ের পরই এই টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে। সাধারণত এটা ৫ কর্মদিবসের মধ্যে হয়ে থাকে।

তবে জরিমানার বিষয়টি প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ডিপিডিসি বলছে- তারা এ বিষয়ে এখনও জানে না। কয়েকবার ফোন দেয়ার পর ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান ব‌লেন, ‌ডিপিডিসিকে ভোক্তা অধিদফতর জ‌রিমানা ক‌রে‌ছে, বিষয়‌টি আমার জানা নেই। আপনাদের কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *