নামছে বন্যার পানি, ধসে পড়ছে পানিতে থাকা কাঁচা ঘর

নিউজ ডেস্ক:: মৌলভীবাজারের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মৌলভীবাজার পৌরসভা, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সদর উপজেলায় অপরিবর্তিত এবং রাজনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যার পানি কমলেও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বরং সেটি আরো বেড়ে গেছে। পানি নামার পর পানিতে ডুবে থাকা কাঁচা ঘরগুলো ধসে পড়ছে। ভেসে ওঠা রাস্তার স্থানে স্থানে বড় বড় গর্ত কিংবা খাদ সৃষ্টি হয়েছে। নলকূপগুলো বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় লোকজন বিশুদ্ধ পানীয় জল পাচ্ছে না।

গত সোমবার রাতে রাজনগর উপজেলার পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীর বাঁধ কালাইরগুলের কাছে প্রায় ৩০ ফুটের মতো ভেঙে গেলে রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ও উত্তরবাগ ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম নতুন করে বন্যাকবলিত হয়েছে। প্রবল বেগে পানি ঢুকে উত্তরভাগ ইউনিয়নের রাজাপুর, সুপ্রাকান্দি, সুরিখাল, সুনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাও, শাফাতপুর, রুস্তমপুর, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সোনাটিকি, কাজিরহাট, মেদেনীমহল ও ফতেপুর ইউনিয়নের বেড়কুড়ি, শাহাপুর, জাহিদপুর, আব্দুল্লাহপুর এই গ্রামগুলো প্লাবিত করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজনগর উপজেলার এসডিও মুখলেছুর রহমান বলেন, যত দ্রুত বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা করছি। এটি মেরামতে সেনাবাহিনীর একটি দল সার্বিকভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। এদিকে রাজনগর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া এবং জেলা সদরের বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজার পৌরসভা, আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদি বন্যার্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী, সচিব এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্গতদের এলাকাসমূহ পরিদর্শন করছেন।

জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং ১১৪৩ মেট্রিকটন চাল ও পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৩৬ ইউনিয়নের প্রায় তিন লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হন। মনু ও ধলাই নদের পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় গত সোমবার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জুন) বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। বন্যাকবলিত যেসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা অনেকেই এখনো নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না।

কমলগঞ্জের পনতউষার গ্রামের আবদুল হান্নান চিনু বলেন, ঘরের ভেতর কোমর পর্যন্ত পানি ছিল। এখন পানি নেমেছে। কিন্তু ঘর বসবাস উপযোগী নেই। তিনি বলেন, তার আশপাশের শতাধিক কাঁচা ঘর ধসে পড়েছে। ঘর ধসে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে খুব দ্রুত নতুনভাবে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়।

রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নের মশাজান গ্রামের জয়নাল আবেদীন শিবু বলেন, ‘আমার পাকা ঘর। বন্যার পানি ঘর থেকে নেমেছে। আমার স্ত্রী ছাড়াও ছোট দুটি সন্তান রয়েছে। চারদিকে পচা গন্ধের কারণে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে কিনা সেই শঙ্কার মধ্যে আছি। এ কারণে স্ত্রী সন্তানকে বাড়িতে আনছি না। তারা এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন। তাছাড়া নলকূপটাও বন্যার পানিতে ডুবে গিয়েছিল। এই নলকূপের পানিতো বিশুদ্ধ নয়। আরো কতো দিন আমাদের এই দুর্ভোগ থাকবে সেটা আল্লাহ জানেন।’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *