ঘর সামলাতে ব্যস্ত আরিফ-কামরান

ওয়েছ খছরু ‘অতিথি’প্রতিবেদক:: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। আপাতত দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনের ধারণা থাকলেও বাস্তবে এককভাবে নির্বাচনের টার্গেট নিয়ে নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের মাঠে নামানো হচ্ছে। তবে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একাধিক প্রার্থী নিয়ে পড়েছে সংকটে। ইতিমধ্যে এই দুই শিবিরে যেসব প্রার্থীরা নির্বাচনে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন যোগ্যতার ভিত্তিতে কেউ কারো চেয়ে কম নন। এখন চলছে ঘরের ভেতরের লড়াই। বিএনপি দলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে এখন টপকাতে হবে দলীয় পরিধি।
বিএনপি এখনো সিলেটে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি। যদিও আরিফুল হক চৌধুরীর নাম ও মার্কা ধানের শীষ দিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়েছে সমর্থকরা।

এ নিয়ে দলের অন্যান্য প্রার্থীদের ভেতরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সিলেটে বিএনপি থেকে এবার মেয়র পদে প্রার্থী হতে চাইছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। এছাড়া ধানের শীষ প্রতীকের জন্য লবিং করছেন গেলো নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ছালাহউদ্দিন রিমনও। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না- সেটি গাজীপুরের নির্বাচনের পর স্পষ্ট হবে। এ কারণে এখনো দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার প্রশ্নই উঠে না বলে দাবি করেন তিনি। ওদিকে স্বস্তিতে নেই আরিফ। গেলো নির্বাচনে তিনি দলের ৫ জন প্রার্থীকে টপকে বিএনপি তথা ৪ দলীয় জোটের সমর্থন লাভ করেছিলেন। এবার এই সংখ্যা কমে গেছে। সিনিয়র অনেক নেতা মামলায় বিপর্যস্ত। কেউ কেউ ফেরারি হয়ে চলে গেছেন প্রবাসে। গতবার দলের ভেতরে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেছিলেন সিলেটের অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। অর্ধশত মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে জামান যুক্তরাজ্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকিসহ অনেক নেতা এবার নিজ থেকে সরে গেছেন। ফলে নাসিম ও সেলিম দুজন বিএনপির টিকিট পেতে লবিং চালাচ্ছেন। আরিফুল হক চৌধুরী গত নির্বাচনে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে একাট্টা হয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো মাঠে ছিল। নির্বাচিত মেয়র হলেও আরিফ দীর্ঘ ২৯ মাস কারাগারে ছিলেন। মাত্র পৌনে তিন বছর তিনি নগর পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি সিলেটের রাস্তা উন্নত করার চেষ্টা চালিয়েছেন।

বিশেষ করে মীরের ময়দান, মীরবক্সটুলা সহ কয়েকটি সড়ককে চার লেনের করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমান মেয়র হওয়ায় আরিফুল হক চৌধুরী এই মুহূর্তে কেন্দ্রের কদর পাচ্ছেন বেশি। বিএনপির মতো সম্ভাব্য দুই মেয়র প্রার্থীর মুখোমুখি রয়েছেন সিলেটের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেট সিটিতে কামরান ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম ভোটের মাঠে রয়েছেন। আসাদ উদ্দিন আহমদ ইতিমধ্যে নীরব ভূমিকা পালন করলেও তার অনুসারীরা সিলেটে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছে। তারা সিলেটে আসাদের পক্ষে মোটরসাইকেল শোডাউন করেছে। এই শোডাউনে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। পাশাপাশি ২৭ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে নিজের বলয় তৈরি করে আসাদ শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে অনেক বিতর্কিত নেতাদের তার সঙ্গে নিয়ে নিজের ক্লীন ইমেজে ফাটল ধরিয়েছেন আসাদ- এমন কথা এখন আওয়ামী লীগেই আলোচিত হচ্ছে। তবে- আসাদ জানিয়েছেন- আওয়ামী লীগ এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এ কারণে আমরা চাইতে পারি। দল যাকে দেবে তার পক্ষে সিলেট আওয়ামী পরিবারের সবাই একাট্টা হয়ে মাঠে নামবে। তবে আওয়ামী লীগের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আসাদ উদ্দিন আহমদকে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিলেটে কামরানের পক্ষে কাজ করতে অনানুষ্ঠানিক নির্দেশ দিয়েছেন। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘনিষ্ঠ জন। তিনি কয়েক বছর ধরে মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। দল থেকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন বলে জানান সেলিম। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলের ভেতরে একাধিক প্রার্থী। তার ওপর শরিক দলগুলো একেক করে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে।

জাতীয় পার্টি থেকে সিলেটে নির্বাচনের মাঠে কাজ করছেন আব্দুস সামাদ নজরুল। তিনি দলীয় প্রধানের নির্দেশে সিলেটে কাজ শুরু করেছেন বলে জানান। তবে সিলেট জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন- সিটি নির্বাচন হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। এ কারণে জাতীয় পার্টি শেষ মুহূর্তে সিলেট নগরে তাদের প্রার্থী সরিয়ে ফেলবে। সমর্থন দিতে পারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে। সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কাজ শুরু করেছেন মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তার পক্ষে সিলেটে পাড়া-মহল্লায় প্রচারণা চালাচ্ছে জামায়াত। নগরীর পাড়ায় পাড়ায় বসানো হয়েছে নির্বাচনী ‘ফ্যাস্টুন’। সিলেটে জামায়াতের ভোট ব্যাংক রয়েছে। এই ভোট ব্যাংক শেষ মুহূর্তেও নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। জামায়াত শেষ মুহূর্তে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা। তারা বলেন, জামায়াত নির্বাচন করতে চায়। একই সঙ্গে চায় ঐক্য। সুতরাং কেন্দ্রীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত হবে সেটি সবাই মেনে নেবেন বলে জানান তারা। এদিকে ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, ইসলামী শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন, জাসদ, বাসদ ও আল ইসলাহসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *