সুনামগঞ্জে চার বছরে বজ্রপাতে নিহত ৯০

নিউজ ডেস্ক:: সুনামগঞ্জের জেলায় এ বছরসহ চার বছরে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন ৯০ জন। বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। মানবসৃষ্ট এ পরিবর্তনের জেরে ধানের ফলন বিলম্বিত হওয়ায় খোলা মাঠে বেশি সময় কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। এছাড়া আবহাওয়া জ্ঞান সম্পর্কে তাদের অসচেতনতা ও উন্মুক্ত হাওর এলাকায় গাছপালার অভাব এবং সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের কারণে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বজ্রপাত ও আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের জন্য জেলার ৫টি উপজেলায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় স্থাপন করা হবে ৫টি আবহওয়া অফিস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বজ্রপাতে যারা মারা যান তাদের বেশির ভাগই হাওর এলাকার প্রান্তিক ও অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের লোকজন। আবহাওয়া ও বজ্রপাতের তথ্য না পাওয়া এবং সচেতনতার অভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত জেলার দিরাইয়ে ১৭ জন, তাহিরপুরে ৯ জন, শাল্লায় ৮ জন, সুনামগঞ্জ সদরে ৭ জন, ধর্মপাশায় ৭ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৬ জন, জগন্নাথপুরে ৪ জন, দোয়ারাবাজার ৪ জন, ছাতকে ২ জন, জামালগঞ্জে ২ জন, বিশ্বম্ভরপু উপজেলায় ১ জনসহ মোট ৬৮ জন বজ্রপাতে মারা যান। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৩৭ জন, ২০১৬ সালে ২০ জন ও ২০১৭ সালে ১১ জন ও ২০১৮ সালে বজ্রপাতে ২২ জনসহ মোট ৯০ জনের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতের ঘটনায় আহত হন অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি। এছাড়া এ বছরের এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে জেলায় আরও ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় আবহওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘হাওর এলাকায় বজ্রপাত বেশি হওয়ার কারণ হলো সেখানে বজ্রপাত হলে কোনও প্রটেকশন পাওয়া যায় না। তাই বজ্রপাত সাধারণত হাইয়েস্ট, লংগেস্ট ও টলেস্ট বস্তুর উপর আঘাত করে। ইদানিং বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু হওয়ার কারণ হলো ধানের যে ক্রাইটেরিয়া এগুলো এখন বিলম্বে পরিপক্ক হয়, তাই পুরো বজ্রপাত মৌসুমে হাওরের খোলা আকাশের নিচে মানুষ বেশি অবস্থান করেন এবং কোনও কোনও সময় বজ্রপাতে মারা যান।’ তিনি বলেন, ‘যখন কোনও মানুষ ভূমিতে হাইয়েস্ট, লংগেস্ট ও টলেস্ট অবস্থানে থাকেন তখন বজ্রপাত আর্থিং করে।’

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘সুনামগঞ্জের শেষ প্রান্তে মেঘালয় পাহাড়ের অবস্থান। তাই স্থানীয়ভাবে তৈরি মেঘ ও জলীয়বাষ্প সরাসরি পাহাড় অতিক্রম করতে পারে না। এ জন্য আকাশে একটি গভীর কালো মেঘমালার ফ্রেমের তৈরি হয়ে বজ্রপাত হয়।’

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে সুনামগঞ্জের সদর,তাহিরপুর,ধর্মপাশা বিশ্বম্ভরপুরসহ ৫টি উপজেলায় অত্যাধুনিক যন্ত্রের সমন্বয়ে ৫টি আবহওয়া অফিস তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে এসব অফিস স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া সিলেটের বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্রটি ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাজ করে। এর মাধ্যমেও মানুষকে বজ্রপাতের আগাম তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে। এতে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, ‘গত বছর সুনামগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক লোক মারা গিয়েছিল। বজ্রপাতের মূল কারণ হলো প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন, মানবসৃষ্ট কারণ।’

তিনি বলেন, ‘এ বছরও সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ২১। আহত হয়েছেন ৫ জন। বজ্রপাতে আহতদের সহায়তার জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার বিধান রয়েছে।’

এমরান হোসেন, ‘বজ্রপাতে যারা মারা যায় তারা হলেন হাওর এলাকার প্রান্তিক ও অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের লোকজন। আবহওয়ার ও বজ্রপাতের তথ্য না পাওয়া ও সচেতনতার অভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

সরকারিভাবে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে হাওর এলাকায় তালগাছসহ বিভিন্ন প্রকার গাছপালা লাগিয়ে বজ্রপাত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এমরান হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ ন্যূনতম এক লাখ টাকা করার প্রস্তাবনা দেওয়া হবে সরকারের কাছে। এটি করা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা দেওয়ার বিধান রয়েছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *