নবীগঞ্জে লন্ডন প্রবাসীর মা ও স্ত্রী খুন: ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এই হত্যাকান্ড

নিউজ ডেস্ক:: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে লন্ডন প্রবাসীর মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগমকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুই হত্যাকারী আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা জাহানের আদালতে এই স্বীকারোক্তি দেয় গ্রেফতারকৃত আসামী তালেব মিয়া এবং জাকারিয়া আহমেদ শুভ। স্বীকারোক্তিতে তারা যুক্তরাজ্য প্রবাসীর সুন্দরী সুন্দরী স্ত্রী রুমী বেগমকে ধর্ষণ করতে গিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে জানায়।

বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। তিনি জানান, সুন্দরী গৃহবধূ রুমীকে ধর্ষণ করাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। রুমী বেগমের স্বামী লন্ডনে থাকেন। আড়াই বছর পূর্বে আখলাক চৌধুরীর সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। বাড়িতে রুমী বেগম এবং তার শাশুড়ি মালা বেগম গেইট তালাবদ্ধ রেখে বসবাস করে আসছিলেন।

সেখানে কোনো সীমানা প্রাচীর ছিল না এবং পাশে কোনো প্রতিবেশীরাও বসবাস করতেন না। কয়েকদিন পূর্বে লন্ডন প্রবাসী স্বামী আখলাক চৌধুরী তার এক বন্ধু রিপনকে তার স্ত্রী রুমী বেগমকে একটি মোবাইলের কাভার কিনে দিতে বলেন। রিপন ব্যস্ত থাকায় গত ১১ মে তার ভাই জয়কে দিয়ে এই কাভার রুমী বেগমের বাড়িতে পাঠান রিপন। জয় মোবাইল কাভার নিয়ে যাওয়ার সময় ওই এলাকার জাকারিয়া শুভ নামে এক বখাটের সাথে পরিচয় হয়। তখন জয়ের সাথে বখাটে শুভও রুমীদের বাড়িতে যায়। জয় মোবাইল কাভারটি রুমী বেগমকে দিলে সেটি তার পছন্দ না হওয়ায় ফেরত দেন। এ সময় রুমী বেগমকে দেখে শুভ তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে।

শুভ জানতে পারে রুমী বেগমদের বাড়িতে অপরিচিত কেউ গেলে গেট খুলে দেয়া হয় না। পাশের বাড়ির ফুরুক চৌধুরীর কর্মরত শ্রমিক তালেব মিয়া মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে গিয়ে কাজ করেন। শনিবার শুভ তালেব মিয়ার সাথে দেখা করে তাকে একটি দোকান থেকে আপ্যায়ন করে এবং মোবাইলে থাকা পর্নোগ্রাফী দেখায়।

এরপর তারা পরিকল্পনা করে রবিবার (১৩ মে) রাতে গিয়ে লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী রুমী বেগমকে ধর্ষণ করবে। রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তালেব মিয়া প্রবাসীর মা মালা বেগমকে দাদী সম্বোদন করে ডাক দেয় এবং গেইট খুলতে বলে। গেইট খুলার পর তালেব মিয়ার সাথে শুভও ভেতরে চলে যায়। তখন মালা বেগম ওই ছেলের পরিচয় জানতে চাইলে শুভ মালাকে হাতে থাকা ছোরা দিয়ে আঘাত করে। মালা বেগম দৌড়ে ঘরে গেলে পিছনে গিয়ে তারা দুইজন তাকে ওড়ানা দিয়ে বেধে ফেলে এবং ছোরা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তার চিৎকার শুনে পাশে থাকা গৃহবধূ রুমী বেগমও চিৎকার শুরু করেন।

এ সময় শুভ রুমী বেগমকেও ছোরা দিয়ে আঘাত করে। রুমী বেগম দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলে তালেব মিয়াও তাকে আঘাত করে। ঘটনার সময় ওই বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বাড়িতে মিটিং ছিল। সেখান থেকে লোকজন চিৎকার শুনে এসে মৃতদেহ দুটি দেখতে পান।

এসপি বিধান ত্রিপুরা আরো জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার আমতৈল গ্রামের আমীর হোসেনের ছেলে তালেব হোসেন (২৪) রুমী বেগমের গ্রামের বাড়ির লোক হওয়ায় সহজেই তাদের বাড়িতে আসা যাওয়ার সুযোগ নেয়। অপরদিকে জাকারিয়া চৌধুরী শুভ (২০) বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে। সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এবং এলাকায় একজন বাখাটে প্রকৃতির লোক হিসবে পরিচিত। শুভ তার নানার বাড়িতে বসবাস করতো। তার পিতা অন্যত্র বিয়ে করে ছোটবেলা থেকেই শুভকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা এবং অবাধ পর্নোগ্রাফি সমাজে অপরাধ সৃষ্টি করে।

এত বড় ঘটনার পর তালেব মিয়া এবং শুভ তাদের ব্যবহৃত ছোরা এবং রক্তমাখা কাপড় ধূয়ে স্বাভাবিকভাবে এলাকায় চলাফেরা করে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সকালে রক্তমাখা কাপড়

এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করে। এই ঘটনায় শুভ’র আরেক বন্ধু ধর্ষণে অংশ নেয়ার কথা ছিল। তাকেও খুঁজছে পুলিশ। তারপর দ্রুত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিলের মাধ্যমে এই মামলার বিচার কাজ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের হাতে নিজ বসত ঘরে খুন হয় বউ-শাশুড়ী। নিহতরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী মৃত রাজা মিয়ার তৃতীয় স্ত্রী মালা বেগম এবং লন্ডন প্রবাসী পুত্র আখলাক চৌধুরী ওরপে গুলজার এর স্ত্রী রুমি বেগম।সোমবার রাতে নিহত রুমি বেগমের ভাই ডাঃ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১১। নবীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত হাবিবুর রহমানকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *