কুকুরের কামড়ে আহত ৩০, গরুর দুধ খেয়ে হাসপাতালে ৯০ জন!

নিউজ ডেস্ক:: বাগেরহাটে কুকুরের কামড়ে নারী শিশুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে কুকুরে কামড়ানো গরুর দুধ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার আতংকে একটি গ্রামের নারী শিশুসহ অন্তত ৯০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ও মির্জাপুর গ্রামে একটি কুকুরের কামড়ে ওই ৩০ জন আহত হন। এর মধ্যে ১২ জনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে এলাকাবাসী ওই কুকুরটিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

কুকুরে কামড়ানো সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা হলেন- বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া গ্রামের আনিস হাওলাদার (১০), সুমন শেখ (১০), তাওহিদুল ইসলাম (১৩), সোভিক দে (১৪), মিরাজুন্নাহার লুসি (৩৮), ময়না বেগম (৬০), সাইদ শেখ (৩৫), আনোয়ারা বেগম (৩০), জাইমা বেগম (৬০), মো আলী শেখ (৪৫), হালিমা বেগম (৫৫) ও সবিতা পাল (৪৫)।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. আলী শেখ বলেন, আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি কুকুর হঠাৎ করে আমার পেছনে কামড়ে ঝুলে থাকে। আমি চিৎকার শুরু করলে কুকুরটি আমার পেছনের মাংসে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে ছেড়ে দিয়ে দৌড় দেয়। পরে আমার স্বজনরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

আরেক কামড়ের শিকার সবিতা পাল বলেন, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠতেই একটি কুকুর দৌড়ে এসে আমার ডান হাত কামড়ে ধরে। অনেক চেষ্টা করে আমি নিজেকে রক্ষা করি। পরে হাসপাতালে আসলে আমাকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়।

কাড়াপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন বলেন, গত দুদিনে কাড়াপাড়া ও মির্জাপুর গ্রামের অন্তত নারী শিশুসহ অন্তত ৩০ জনকে কামরায় ওই কুকুরটি। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে আমরা এলাকাবাসী সবাই মিলে কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছি।

অন্যদিকে ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফোরকান শিকারী বলেন, ফকিরহাটের চাকুলি গ্রামের বেল্লাল শেখের গরুর দুধ ওই গ্রামের প্রায় দশটি পরিবার নিয়মিত পান (টাকার বিনিময়ে জোগান) করে আসছে। ওই দশটি পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১০০ জনের ওপরে। কয়েক দিন আগে ওই গরুটিকে কুকুরে কামড়ালে গরুটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা না জেনে ওই কুকুরে কামড়ানো গরুর দুধ পান করতে থাকে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হলে ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা তাদের জলাতঙ্ক হতে পারে বলে আতংকিত হয়ে পড়ে। পরে তারা এই বিষয়টি আমাকে জানালে আমি প্রায় ৯০ জনকে চিকিৎসার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।

গরুর মালিক বেল্লাল শেখ বলেন, আমার এই গাভীর দুধ চাকলি গ্রামের দশটি পরিবারকে দিয়ে থাকি। বুধবার আমার গুরুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি প্রাণী চিকিৎসককে ডেকে গরুটিকে দেখাই। তিনি গরুটি দেখে তাকে কুকুরে কামড়েছে বলে নিশ্চিত হন। তবে কবে কখন গোয়ালে থাকা গুরুটিকে কুকুরে কামড়েছে তা বলতে পারব না। বুধবারও আমি এই গরুর দুধ ওই দশ পরিবারের মাঝে সরবরাহ করি। এ ঘটনায় আমি নিজেও প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নিয়েছি।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মশিউর রহমান বলেন, কুকুরে কামড়ানো গরুর দুধ পান করে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় শিশু ও নারীসহ প্রায় ৯০ জন হাসপাতালে আসে। আমরা তাদের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন দিয়েছি। এক মাসের মধ্যে চারটি ভ্যাকসিন নিলেই তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। এরা সবাই এখন আশঙ্কামুক্ত। এতে আতংকিত না হয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ওই চিকিৎসা কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার দুটি গ্রাম থেকে কুকুরে কামড়ানো নারী ও শিশুসহ অন্তত ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুকুরে কামড়ানোর ক্ষত রয়েছে। তাদের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *