নিউজ ডেস্ক:: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
খালেদার জামিন আবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আবেদন খারিজ করে বুধবার হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ।
রায়ের কয়েক ঘণ্টা পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী আপিল বিভাগে গিয়ে রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশ চাইলেও আদালত তা নাকচ করে দেন।
আদালত থেকে বলা হয়, এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়ার সুযোগ আইনে নেই। একপর্যায়ে আদালত বলেন, আমরা দলবল দেখে আদেশ দিই না।
আপিল বিভাগের বিরতির পর বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের সংক্ষিপ্ত আদেশ চাচ্ছি। বেল বন্ড দাখিল করার জন্য সংক্ষিপ্ত আদেশ দরকার। আপনাদের আজকের রায় পত্রপত্রিকা ও টিভিতে প্রচার করা হয়েছে। হয়তো আপনাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। আমাদের দিতে অসুবিধা নেই।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপত্তি জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া তো আরও কয়েকটি মামলায় শোন অ্যারেস্ট আছেন। তা ছাড়া আপিল বিভাগ থেকে এ ধরনের শর্ট অর্ডার দেয়ার নজির নেই।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, এ ধরনের শর্ট অর্ডার দেয়ার নজির নেই। তখন প্রধান বিচারপতি খালেদার আইনজীবীকে বলেন, আপনার আবেদন রিফিউজ করা হল।
এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের রুলসে শর্ট অর্ডার দেয়ার বিধান আছে।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, হাইকোর্টের বিধান কি আমাদের জন্য মানা বাধ্যতামূলক?
আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি তা বলছি না। আপনারা চাইলে তা দিতে পারেন। প্রধান বিচারপতি আবার বলেন, আপনার আবেদন রিফিউজ করা হল।
আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি তো একা এসেছি। দলবল নিয়ে আসিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, এটি কেমন কথা? দলবল নিয়ে এলেই কি আমরা আদেশ দিয়ে দিই? দলবল দেখে আমরা আদেশ দিই না।
বেঞ্চের অপর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এজে মোহাম্মদ আলীর মন্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আপনি গুরুতর আপত্তিকর কথা বলেছেন। আপনি আমাদের ফোর্স করতে পারেন না। আপনারা ভুলে যান যে কোর্টে আপনারা আইনজীবী। অফিসার অব দ্য কোর্ট। কোনো দলের লোক নন। তখন এজে মোহাম্মদ আলী তার মন্তব্যের জন্য আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ পর্যায়ে এক বিচারপতি এজে মোহাম্মদ আলীকে বলেন, প্রধান বিচারপতি যেখানে নাকচ করে দিয়েছেন, সেখানে আবার তর্ক করছেন কেন।
শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার আবেদন আমরা বিবেচনা করতে পারলাম না। বিবেচনা করার সুযোগ নেই।
এদিন আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার খন্দকার মাহবুব হোসেন, নওশাদ ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এর পর থেকে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
রায়ের পর আপিল করে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া, যার ওপর শুনানি নিয়ে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট তাকে চার মাসের জামিন দেন।
এ জামিন স্থগিত চেয়ে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আবেদন করে। শুনানি নিয়ে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ ওই জামিন স্থগিত করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেন। অন্যদিকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা, যা সেদিন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে।
আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। পরে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল করে। ১৯ মার্চ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত রেখে শুনানির জন্য ৮ মে নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ।