সংবাদ সম্মেলন: গার্ডেন টাওয়ারে ভাড়াটিয়া পরিবারকে নির্যাতনের অভিযোগ

নগরীর উপশহরস্থ গার্ডেন টাওয়ারের নবম তলায় একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া পরিবারকে তিন মাস থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে একটি ফ্ল্যাটি লুটপাট ও এই পরিবারকে পুলিশ দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন থেকে দফায় দফায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার প্রতিবাদ করায় এমনটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভূগি পরিবার। এনিয়ে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও পুলিশ তা গ্রহন করেনি। বর্তমানে পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

বুধবার সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ফ্ল্যাটটির বাসিন্ধা রাবেয়া বেগম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি ২০১৫ সালের ৬ই মে গার্ডেন টাওয়ারের দি ম্যান এন্ড কোম্পানী থেকে মেইনটেনের অফিসার সুরঞ্জন বাবুর কাছ থেকে মাসিক ফ্ল্যাট ভাড়া ৮০০০ ও বিদ্যুৎ বিল জেনারেটর, ডিস বিল, সার্ভিসচার্জ, গ্যাস বিল সহ ৪০০০ মোট ১২০০০ টাকায় নবম তলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করি। অগ্রিম বাবদ ১৫০০০ টাকা দিয়ে আমি মেইনটেনেল অফিসার সুরঞ্জন বাবুর কাছ থেকে চাবি নিই। কিন্তু ১ম মাসেই আমার বাসা ভাড়া আসে ১২,৬০০ টাকা, ৬০০ টাকা বেশি আসার কারণ জানতে চাইলে ক্যাশিয়ার মামুন ও ম্যানেজার ইকবাল আমাকে টাকা দিতে বলেন আমি টাকা না দিলে উনারা আমার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেন। আমি নিরুপায় হয়ে টাকা দেই এবং উনারা বিদ্যুৎ সংযোগ করে দেন। এভাবে প্রতি মাসে ভাড়া বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালের আগষ্ট মাসে আমার বাসার বিলের রশিদে হোল্ডিং ট্যাক্স আসে ১০১১৩ টাকা আসে। হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয় অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে তিনজন সুরঞ্জন বাবু, মামুন ও ইকবাল আমাকে অপমান করেন এবং আমাকে হোল্ডিং ট্যাক্সের জন্য চাপ দেন। আমি হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা না দিয়ে শুধু ফ্ল্যাটে ভাড়া আর সার্ভিস চার্জ দিই, টাকা হাতে পেয়ে আমাকে কোনো প্রাপ্তি রশিদ না দিয়ে আমার বাসার বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয়। আমি বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসবাহকে জানাই। উনি আমাকে টাকা না দিলে বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে না বলেন, আমি হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে বাধ্য হই। এভাবে প্রতিনিয়ত ভাড়া বাড়তে থাকে।

তিনি বলেন, আমি নিয়মিত বিল পরিশোধ করলে আমাকে কোনো রশিদ দেওয়া হয় না। হাতে লিখে হ্যান্ডনোট দেওয়া হয়। ভাড়া বাড়তে দেখে আমি এখান থেকে চলে যাব বলে সিদ্ধান্ত নেই। ইকবাল, মামুন, সুরঞ্জন, মিসবাহ সবাইকে জানাই। উনাদের অনুমতি নিয়া উপশহর ৩৭নং রোডে একটি বাসা দেখে অগ্রিম করে আসি। বাসায় এসে আমি অফিসে যাই। বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে উনারা আমাকে নানারকম অপমানজনক কথাবার্তা বলেন। আমি উনাদের বলি আগামী মাসে বাসা ছেড়ে দেব। তখন সাথে সাথে উনারা আমার কাছে ১ লক্ষ টাকা বকেয়া পান বলে দাবী করেন। আমি উনাদের বলি আমি আপনাদের কাছ থেকে সর্বমোট ১২০০০ টাকায় ভাড়া নিয়েছি কিন্তু আমার বাসার ভাড়া আসে ১৬০০০, ১৭০০০ করে ভাড়া আসে যেখানে আপনাদের সার্ভিসচার্জ ২৫০০ টাকার বেশি আসার কথা নয় সেখানে আপনারা আমার রশিদের ২৭০০, ৩০০০,৩৪০০,৪০০০ এতো টাকা বেশি করে আমার কাছ থেকে প্রতিবার নিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, এভাবে ২০১৫ এর ৬ই মে হতে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত আমি উনাদের মোট ৫,৮০,০০০ টাকা দিই। কিন্তু উনারা আমাকে কোনো রশিদ দেন নাই। অক্টোবর ৭ তারিখে আমি উনাদের টাকা দিই। আর ১০ তারিখে উনারা আবার আমার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। আমার ৩টা মেয়ে কলেজ ভার্সিটিতে পড়ে আর ছোটো ২টা ছেলে স্কুলে পড়ে সামনে ওদের ফাইনাল পরীক্ষা আপনারা বিদ্যুৎ সংযোগ করে দিন। কিন্তু উনারা দেননি।

তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ডিসেম্বর স্কুল বন্ধ হওয়ায় আমি ১ সপ্তাহের জন্য বাড়ি যাই। এই সুযোগে এমডি মিসবাহ উনাদের স্টাফরা মিলে আমাকে ফোন করে বলেন দেড় লক্ষ টাকা না দিলে আমি বাসায় ঢুকতে পারব না। এমনকি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উনারা আমাকে বাসায় আসতে দেন নি। জানুয়ারি ২০১৮ আমার ছেলের কাতারের ভিসা আসে। আমার বাসায় নগদ ১ লক্ষ টাকা রাখা ছিল। আমার মেয়েদের প্রায় ১৫ ভরি স্বর্ণ ও ছিল। আমি ভিসার জন্য ২ লক্ষ টাকা বাড়ি থেকে পরিশোধ করি আর ১ লক্ষ টাকা ও স্বর্ণ নেওয়ার জন্য বাসায় আসি। কিন্তু বাসার নিচে এসে জানতে আমার নাকি বাসায় ঢুকা নিষেধ। আমি উনাদের বুঝানোর চেষ্টা ও করলাম আমার বড় ছেলে ওর ভিসার জন্য টাকা নিতে হবে আমার বাসায় টাকা না হলে ওর ভিসা বাতিল হয়ে যাবে কিন্তু উনারা আমাকে কিছুতেই ঢুকতে দিল না। নিরুপায় হয়ে ফিরে গেলাম। এরপর ফেব্রুয়ারি ১৩ তারিখে এমডি মিছবাহ আমাকে ফোন করে অফিসে আনেন এবং মধ্যস্তকারী ২ জন লোকসহ উনার অফিসের ম্যানেজার ইকবাল সাহেবকে দিয়ে বাসায় পাঠান। তখন আমার বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। আমার বাসার সবকিছু এলোমেলো আমার পারটেক্সের সকেচ এর গ্যাস ভাঙ্গা। আমি অবাক হই বাসার এরুপ অবস্থা দেখে। আমি মধ্যস্থকারী সহির ভাই মছব্বির মিয়া এবং আমাদের সাথে আসা ম্যানেজার ইকবার সাহেবকে এসব দেখাই। আমি আমার ঘরের ৩২ ইঞ্চি টিভি, ওয়ালটন কোম্পানীর ফ্রিজ দেখতে না পেয়ে আমি উনাদের সাথে আবার অফিসে ফিরে যাই। বাসার এ অবস্থা দেখে আমি আমার ষ্টীলের বক্সের তালা ভাঙ্গা দেখে আমি খুলি এবং চেক করে দেখি আমার নগদ ১ লক্ষ টাকা ও আমার মেয়েদের স্বর্ণ নেই।

তিনি বলেন, এসময় এমডি মিছবাহ আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, আমি সিলেট থাকতে পারব না উনি আমাকে থাকতে দিবেন না। এসব বিষয় নিয়ে আমি পুলিশের দারস্ত হই কিন্তু পুলিশ আমার অভিযোগ নেয়নি। এমতাবস্তায় আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
তিনি বিষয়টি সুরাহা করার জন্য সিলেটের প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান। – বিজ্ঞপ্তি

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *