অর্থনীতি ডেস্ক:: ভোক্তাদের শঙ্কাই তাহলে সত্যি হচ্ছে! রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, রসুন ও শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে। আর গত দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। অথচ রমজান উপলক্ষে এবার চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি নিত্যপণ্যের মজুদ রয়েছে। পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার মাত্র ১০ দিন আগে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় হতাশ ভোক্তারা।
এদিকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি রোধে মাঠে নামছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি মনিটর করবে তারা। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি টিম বাজারে নজরদারি করবে। রমজানে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরানবাজার, নিউমার্কেট ও তুরাগ এলাকার বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি ও শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে। মিল থেকে চাহিদামতো চিনির সরবরাহ নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য চিনির দাম বাড়তির দিকে। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। তুরাগ এলাকার সাদ্দাম জেনারেল স্টোরের মোঃ সাদ্দাম বলেন, পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি বস্তা চিনিতে ২৫০ টাকা বেড়েছে বলে তিনি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দিন আগে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনির দাম ছিল ২ হাজার ৫৫০ টাকা। আর এখন ২ হাজার ৮শ’ টাকা।
মেঘনা গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) নাসির উদ্দিন বলেন, রমজানের জন্য হঠাত্ করেই চিনির চাহিদা বেড়েছে। এতে সরবরাহে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। যথেষ্ট পরিমাণে চিনি রয়েছে। আর মিলে চিনির দাম বাড়েনি বলেও তিনি জানান।
গতকাল টিসিবির হিসাবে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ছিল যথাক্রমে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা ও ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। গত এক মাস ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বাড়ছে। এছাড়া প্রতি কেজি শুকনা মরিচের দাম ১০ টাকা বেড়ে ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানিকৃত রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রমজানে মূলত ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি বছর রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে আড়াই লাখ টন, চিনি ৩ লাখ টন, ছোলা ৮০ হাজার টন, খেজুর ১৮ হাজার টন এবং পেঁয়াজ ৪ লাখ টন। কিন্তু বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে ২২ দশমিক ৫৯ লাখ টন, চিনি ৪ দশমিক ৩৫ লাখ টন, ছোলা ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন, খেজুর ৬৪ হাজার টন ও পেঁয়াজ ১৭ দশমিক ৯১ লাখ টন। গত মার্চ পর্যন্ত এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হিসাব ধরে মজুতের এ হিসাব দেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে দেশে চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি নিত্যপণ্যের মজুত রয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও এসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম কেজিপ্রতি ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, ছোলা ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, খেজুর প্রতি কেজি ৭০ টাকা, চিনি ৩৮ থেকে ৪১ দশমিক ৭৬ টাকা ও পেঁয়াজের দাম ১৮ টাকা ৬৫ পয়সা থেকে ২০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে। পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উত্স ভারতের বাজারে কোনো অস্থিরতা নেই। দেশে উত্পাদনও হয়েছে পর্যাপ্ত। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে।