দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে

নিউজ ডেস্ক:: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দিকেই এখন সবার চোখ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের শুনানি হতে পারে আগামীকাল। হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করে ৮ই মে শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল গ্রহণ করে গত ১৯শে মার্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন। ৮ই ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর ১২ই মার্চ হাইকোর্টে জামিন পেলেও তা স্থগিত করে দেয় আপিল বিভাগ।

ওদিকে খালেদা জিয়ার বৃটিশ আইনজীবী লর্ড কার্লাইল বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিচার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এদিকে, সব মিলিয়ে ৮৮ দিন কারাভোগ করেছেন খালেদা জিয়া।

কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তার আইনজীবী ও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ- পরিত্যক্ত ভবনে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, নিঃসঙ্গতা ও অর্থোপেডিক বেডের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খালেদা জিয়া। তার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। দুই মাস ধরে চলছে এ বিতর্ক। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অব্যাহতভাবে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। অসুস্থতার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনকে কোনো মামলাতেই নিম্ন আদালতে হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। বিএনপির দাবি অনুযায়ী ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে ও পছন্দের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেয়ার দাবিতে সাড়া দেয়নি সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও লাভ হয়নি কোনো। সরকারি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে দুই দফা পরীক্ষা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে কয়েকটি এক্স-রে করা হয়েছে তার। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আত্মীয়স্বজন ও দলের নেতাদের সঙ্গে নির্ধারিত কয়েকটি সাক্ষাৎও বাতিল করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কয়েক দিন আগে কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অসুস্থতার তীব্রতা সম্পর্কে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। শনিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার ৫ আইনজীবী। তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, জামিনের বিষয়ে খালেদা জিয়া জানতে চাইলেন- ‘কী অবস্থা?’ আমরা তাকে বলেছি, হাইকোর্ট যে রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে তাকে জামিন দিয়েছেন, সেই জামিন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃৃপক্ষ স্থগিত করার নজির নেই। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যেকোনো কারণেই হোক তার জামিন স্থগিত করেছেন। আমরা আশা করি, দেশে বিন্দুমাত্র ন্যায়বিচার থাকলে ৮ই মে শুনানির দিন তিনি জামিন পাবেন। খন্দকার মাহবুব হোসেন জানান, ৮ই মে‘র শুনানিতে জামিন পাবেন, খালেদা জিয়া নিজেও এমন বিশ্বাস করেন। অন্য আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বলেছেন- ‘আমি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ। এটা কোর্টকে জানাবেন। মেডিকেল গ্রাউন্ডে হাইকোর্ট আমাকে জামিন দিয়েছেন, এটা সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপন করবেন।’

ওদিকে শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র নেতারা একটি যৌথসভা করেছেন। সেখানে আপিল বিভাগে শুনানি ও নতুন আদেশ নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে নেতাদের মতামত নিয়েছে নীতিনির্ধারক ফোরাম। ওদিকে বিএনপির আন্দোলনের ধরনে পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সভায় তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনে বিএনপির আন্দোলনের ধরনে পরিবর্তন হতে পারে। খালেদার বিচার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র: কার্লাইল খালেদা জিয়ার বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এমন পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণের ঘাটতি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে বিচার করা হয়েছে এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। খালেদা জিয়ার আইনজীবী দলের অন্যতম সদস্য বৃটিশ সিনিয়র আইনজীবী লর্ড অ্যালেক্স কার্লাইল কিউসি এসব কথা বলেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা।

দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি জেলে রয়েছেন। এ বিষয়ে অ্যালেক্স কার্লাইল বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার করাকে ‘জাস্টিফাই’ বা সমর্থন করে এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ এখনও পর্যন্ত তিনি দেখতে পাননি। আর তাকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা। তিনি সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে এসব কথা বলেছেন। লর্ড কার্লাইল আল-জাজিরাকে বলেছেন, আমি এমন কিছুই দেখিনি যা থেকে বলা যায়, আমার এই মক্কেল কোনো রকম দুর্নীতিতে জড়িত। তিনি আরো বলেন, এ বছরের শেষের দিকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমি পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি, তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে কোনোই প্রমাণ নেই। দৃশ্যত নির্বাচনের কারণেই তাকে এই উপায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটা ধরে নেয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। এর একটাই উদ্দেশ্য। তা হলো সরকার চাইছে না তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিন। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া ১৯৯১ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত এবং আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দু’দফা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাকে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের জেল দিয়েছেন আদালত। একই আদালত খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও অন্য চারজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিজনকে ১০ বছর করে জেল দিয়েছেন। অভিযুক্ত ছয়জনের বিরুদ্ধে ওই ট্রাস্ট থেকে ২ লাখ ৫২ হাজার ডলার আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। ওদিকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে বিএনপি শর্ত দিয়েছে। তারা বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও মুক্ত হওয়া এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির ওপর নির্ভর করছে তাদের অংশগ্রহণ। এদিকে, বৃটিশ আইনজীবী লর্ড অ্যালেক্স কার্লাইলের মন্তব্যের জবাবে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। এটা আদালতের রায়ের বিষয়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *