গাজীপুরে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ১৯ দফা ইশতেহার

নিউজ ডেস্ক:: পরিকল্পিত নগরায়ন ও সেবা দানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করাসহ ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে টঙ্গীতে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।

হাসান সরকার বলেন, তিনি বিজয়ী হলে দেশি-বিদেশি নগর বিশেষজ্ঞ ও পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে নগরায়ণের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের সমস্যা চিহ্নিত করতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ‘নাগরিক উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করবেন।

দুর্নীতি বন্ধে সব ধরনের দরপত্রে ই-টেন্ডারিংয়ের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি বিজয়ী হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সব ধরনের সেবা দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ করব।

“নাগরিকদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে পেশিশক্তি, মাস্তানি, টেন্ডারবাজিসহ সকল অনৈতিক প্রভাববলয় থেকে মুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

১৯ দফা
১. নগরায়ণের মাস্টার প্লান: দেশি-বিদেশি নগর বিশেষজ্ঞ ও পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে প্লান প্রণয়ন করে সেই অনুযায়ী উন্নয়ন কার্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে।

২. নগরভবন নির্মাণ: পুরনো পৌরভবনে কাজ চলে না। বিশ্বের সেরা নগরভবনগুলোর সঙ্গ মিল রেখে প্রখ্যাত স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদদের তত্তাবধানে নগরভবন বানানো হবে।

৩. পুলিশ, সওজ, ডেসকো, টিঅ্যান্ডটি ইত্যাদি সেবাদানকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।

৪. দুর্নীতি ও স্বচ্ছতা : সব ধরনের সেবা দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ করা হবে। সব দরপত্রের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

৫. শিক্ষা: স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগুলোকে সিটি করপোরেশনের তদারকে উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতিম, দুস্থ ও গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়া হবে।

৬. স্বাস্থ্য: নগর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অনলাইনসেবার আওতায় আনা হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৭. আবাসন: শ্রমিকসহ সবার জন্য সুপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প করা হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য পর্যায়ক্রমে স্বল্প মূল্যের বাসস্থান নির্মাণ করা হবে।

৮. নিরাপত্তা: সিসি ক্যামেরা, কমিউনিটি পুলিশ ও নৈশ প্রহরী নিয়োগ করে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

৯. যাতায়ত: সব সড়ক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলাচল উপযোগী করার পর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

১০. যানজট: সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে গাজীপুরকে গতিময় রাখা হবে অন্যতম লক্ষ্য। যানজট নিরসনে নিরাপদ ও পরিকল্পিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

১১. পরিচ্ছন্নতা: আধুনিক দৃষ্টিনন্দন গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে। সূর্যোদয়ের আগেই সড়কের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শেষ করা হবে।

১২. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও দাতাদের সহায়তা নেওয়া হবে।

১৩. সবুজ, পরিবেশবান্ধব নগর: পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলো ঘিরে পরিকল্পিত বৃক্ষায়ণের মাধ্যমে সবুজায়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। বাসা-বাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

১৪. জলাবদ্ধতা: এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

১৫. বিশুদ্ধ পানি: ৫৭টি ওয়ার্ডেই বিদ্যমান গভীর নলকূপগুলো সচল রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় গভীর নলকুপ স্থাপন করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৬. বিদ্যুৎ ও গ্যাস: নগরবাসীর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সব ওয়ার্ডে পল্লী বিদ্যুতের পরিবর্তে ডেসার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব এলাকায় গ্যাস লাইন নেই সেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহের চেষ্টা চালানো হবে।

১৭. ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিনোদন: খেলাধুলা ও শরীরচর্চার উপযোগী প্রয়োজনীয় পার্ক ও মাঠ নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে গণগ্রন্থাগার স্থাপনসহ বিশেষ বিশেষ জায়গায় কয়েকটি ডিজিটাল লাইব্রেরি চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

১৮. নাগরিক সেবা আধুনিক হবে: নাগরিক সেবা, অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালু করা হবে। মাসে অন্তত একদিন মেয়রকে সরাসরি ফোন করতে পারবেন নগরবাসী। নগর ভবনের সব কাজ অনলাইনভিত্তিক করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৯. অন্যান্য: সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে গাজীপুরবাসীর ঝাঁপিয়ে পড়ার দিনটি ১৯ মার্চ যথাযথ মর্যাদায় পালনের ব্যবস্থা করা হবে। পর্যাপ্ত কবরস্থান ও শ্মশান স্থাপন করা হবে। প্রেসক্লাবকে আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জাসাসের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বাবুল আহমেদ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় সদস্য মাজহারুল আলম, আব্দুল মতিন, আবু বকর সিদ্দিক ও মাওলানা এসএম রুহুল আমিন ইশতেহার ঘোষণার সময় ছিলেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *