নিউজ ডেস্ক:: মহান মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস কি জানে না জেলার ২০ সহস্রাধিক চাতাল শ্রমিক। মে দিবসে শ্রমিকদের জন্য সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও প্রতিদিনের মতো কাজ করতে হয় তাদের। জীবনের সাথে যুদ্ধ ও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কোনো রকমে জীবন বাঁচানের তাগিদে কাজ করে বেঁচে আছেন তারা। এখানে কর্মরত শ্রমিকরা দিন-রাত বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে ধান থেকে চাল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ মানুষের চালের চাহিদার যোগান দেন। সেই চাতালের নারী ও পুরুষ শ্রমিক তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যুগের পর যুগ বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
সরেজমিনে জেলার চাতালকলগুলোতে গিয়ে জানা যায়, ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চাতাল কলের গোড়াপত্তন হয়। ধীরে ধীরে জেলার সরাইল, কসবা, নাসিরনগর, আখাউড়া, বিজয়নগর ও সদর উপজেলায় কিছু কিছু চাতালকল গড়ে উঠেছে। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বৃহত্তর ধান ও চালের মোকাম আশুগঞ্জসহ জেলায় সব মিলিয়ে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক চাতালকল। আর এখানে নিয়োজিত আছে প্রায় ২০ সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নওগাঁ ও ময়মনসিংহসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।এসব শ্রমিক দিনে-রাতে কাজ করছেন ধান থেকে চাল উৎপাদন কাজে।
এ চাতালকলগুলো থেকে প্রতিদিন ৩০/৩৫ হাজার টন চাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এই চাতালকলগুলোতে ধান সিদ্ধ করা থেকে শুরু করে চাল বস্তাবন্দী করা পর্যন্ত সকল কাজ করতে হয় এই শ্রমিকদের। এসব চাতালকলে কর্মরত শ্রমিকরা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস বা মে দিবস কি জানেন না। এই দিনে সরকারি ছুটির কথা থাকলেও কাজ করতে হয় চাতাল-শ্রমিকদের। আর কাজ না করলে বেতন হবে না তাই দিনে-রাতে সমানে কাজ করেন তারা।
খাঁন মোহাম্মদ অটো রাইস মিলের চাতাল শ্রমিক মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের কথা কখনো শুনি নাই। এই দিনে আমরা কখনো কোনদিন কাজ বন্ধ রাখি নাই। কাজ না করলেতো পেটে খাবার মিলবে না। তাই কাজ করে যাই ছুটির চিন্তা করি না।’
চাতালকন্যা মরিয়ম বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘মানুষের ঘোরাঘুরি করার অনেক ইচ্ছা থাকে। তারা তা করতেও পারে। আমাদেরও ইচ্ছা করে অন্য মানুষের মততো বিভিন্ন উৎসবে একটু বেড়ানোর। কিন্তু আমাদের দ্বারা তা আর সম্ভব হয় না।’
আশুগঞ্জ রাইস মিল শ্রমিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন জানান, ‘মালিকরা আমাদের অনেক ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। বিশেষ করে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসেও তারা আমাদের ছুটি দেন না। বিভিন্ন সময়ে এসব দাবি নিয়ে মালিকদের সাথে আলোচনা করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো দাবিই তারা মানেন নাই।’
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাতালকল ও হাসকিং মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস কি তা আসলে জানে না এখানে কর্মরত শ্রমিকরা। তারা এদিনে কাজ বন্ধ রাখলে মালিকরা শ্রমিকদের কোনো প্রকার চাপ দেয় না। মে দিবসে যেন তাদের জন্য ছুটির পাশাপাশি ভাতার ব্যবস্থা করা হয় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।’