মে দিবসের গুরুত্ব জানে না শ্রমিকরা

নিউজ ডেস্ক:: শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিকের কর্মস্থল। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মে দিবস পালন করলেও তাদের কাছে অনেকটাই অজানা শ্রমিক অধিকার ও দিবসটির গুরুত্ব।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মে দিবসের সঠিক জ্ঞান না থাকলে অসাধু মহল তাদের ভুল পথে চালনা করে দেশকে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন করবে।

রাজধানীর খুব কাছে সাভার ও আশুলিয়ায় দেড় হাজার শিল্প-কারখানায় এখন প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিকের কর্মস্থল। বিরতিহীন কাজে কেউ বুনছে নতুন পোশাক, আবার কেউ হাতুড়ির আঘাতে ভাঙছে ইট-পাথর। কেউবা আবার অচল গাড়ি সচলের কাজ করছেন। সারা বিশ্বের ন্যায় সাভারেও প্রতিবছর ঘটা করে পালিত হয় শ্রমিক অধিকারের মে দিবসটি। তবে প্রায় সব শ্রমিকদের কাছে এখনও মে দিবসের সঠিক পথের গলি যেন আঁধার ঘরে আটকে আছে। সাধারণ শ্রমিকদের জানা নেই অধিকারের বিষয়বস্তু, বুঝে উঠতে পারছেন না চাওয়া পাওয়ার হিসাব-নিকাশ। শুধু জানেন এই দিনে কাজ বন্ধ।

জমিলা বেগম নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক মে দিবস প্রসঙ্গে বলেন, ‘কারখানায় কাম করি। বিয়ানে যাই, রাইতে ফিরি। মে দিবসে আমাগো কারখানার কাম বন্ধ থাকে। একটা দিন সবার লগে ছুটি কাটাই। শুধু জানি ১ মে শ্রমিক দিবস বন্ধ, আর কিচ্ছু জানি না।’

আরেক শ্রমিক শরিফ বলেন, ‘শ্রমিকগো দাবি লইয়া আন্দোলন হইছিল জানি। কিন্তু কিয়ের লিগা হইছিল তা জানি না। হারাদিন কাম কইরা এইয়া লইয়া চিন্তার সময় নাই।’

শ্রমিক দিবসে এক দিনের সরকারি ছুটি থাকলেও অনেকের কাছে অভাবের ভাঙ্গা ঢেড়ায় এই একদিন কাজ বন্ধ করাও যেন বিলাসিতা। একদিকে ক্ষুধা, অন্যদিকে চাকরি হারনোর ভয়, তারমধ্যে পাল্লা দিতে হয় কাজের সঙ্গে।

তারই প্রমাণ মেলে পরিবহন শ্রমিক আনোয়ারের কথায়। আনোয়ার বলেন, ‘দিবস-টিবস বুঝি না। কারখানা বন্ধ থাকলে আমরা গাড়ি বাইর করতে পারুম না। গাড়ি বাইর না করতে পারলে কামাই বন্ধ।’

আর গ্যারেজ শ্রমিক আশিক বলেন, ‘আমাগো সংসারে অভাব। টানাটানি লাইগ্যাই থাকে। তার উপরে কাম বন্ধ রাখলে চলুম কেমনে? আর শ্রমিক দিবস বুঝি না, কাম করি ভাত খাই।’

শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ আশুলিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ইমাম হোসেন জানান, এ সব শ্রমিকের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে কুচক্রিমহল কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে, তাই এই মে দিবসের সেই সচেতনতা গড়ে তুলতেই শ্রমিকদের নিয়ে সমাবেশ করা হবে। পাশাপাশি শ্রমিকের ন্যায্য দাবি পূরণে শিল্প মালিক ও সরকারকে আরও আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানান এই শ্রমিক নেতা।

শ্রমিকের ঘামে দেশের অর্থনীতি আজ সচল। অর্থনীতির এই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে তাদের শ্রমকে সম্মান জানিয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিল্প শ্রমিকদের পাশাপাশি অন্যান্য শ্রমিকদের অধিকার নিয়েও আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে।’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *