বজ্রপাত বন্ধের উপায় নেই, প্রাণহানি এড়ানোর সুযোগ আছে

নিউজ ডেস্ক:: সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে রোববার অন্তত প্রায় ১৮ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চলতি মাসে এ নিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু প্রায় ৫০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে বজ্রপাতে বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। বছরের এ সময়টিতে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতও হচ্ছে ব্যাপকভাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাওহিদা রশিদ বলছেন, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক আছে।

বজ্রপাত বাড়ার কারণ কী?

অধ্যাপক তাওহিদা রশিদ বলছেন, বিজ্ঞানীরা অনেকে মনে করেন বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এটি বেশি হচ্ছে। তবে অনেক বিজ্ঞানীই আবার এ মতের সঙ্গে একমত নন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরাও ভাবছি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই তাপমাত্রা বেড়েছে এবং এর কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশে দশমিক ৭৪ শতাংশ তাপমাত্রা বেড়েছে।

বজ্রপাত বিকালে বেশি হয় কেন?

তাওহিদা রশিদের মতে, বজ্রপাতের ধরনই এমন। সকালের দিকে প্রচণ্ড তাপমাত্রা হয়। আর তখন এটি অনেক জলীয় বাষ্প তৈরি করে। এ জলীয় বাষ্পই বজ্রঝড় ও বজ্রপাতের প্রধান শক্তি। তাপমাত্রা যত বাড়বে, তখন জলীয় বাষ্প বা এ ধরনের শক্তিও তত বাড়বে।

তিনি বলেন, জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া মানেই হল ঝড়ের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া। বছরে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ১২শতাংশ বজ্র ঝড় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি কোনো কোনো বিজ্ঞানী প্রমাণ করেছেন।

প্রাণহানি এড়ানোর উপায় কী?

তাওহিদা রশিদ বলেন, বজ্রপাত প্রকৃতির একটি বিষয় এবং এটি হবেই। তবে এতে প্রাণহানি কমানোর সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, বজ্রঝড় যখন শুরু হয়, এর তিনটি ধাপ আছে। প্রথম ধাপে বিদ্যুৎ চমকানি বা বজ্রপাত শুরু হয় না। প্রথমে মেঘটা তৈরি হতে থাকে এবং সেই সময় আকাশের অবস্থা খুব ঘন কালো হয় না। একটু কালো মেঘের মতো তৈরি হয়। সামান্য বৃষ্টি ও হালকা বিদ্যুৎ চমকায়। আর তখনই মানুষকে সচেতন হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দুর্যোগে একটি নির্দিষ্ট সময় আছে এবং সে সম্পর্কে প্রতিটি মানুষকে সচেতন করা উচিত। বাইরে থাকলে যখন দেখা যাবে আকাশ কালো হয়ে আসছে, তখনই নিরাপদ জায়গায় যেতে হবে। এ সময়টিতে অন্তত আধঘণ্টা সময় পাওয়া যায়।

কোন নির্দিষ্ট এলাকায় বর্জপাত বেশি হয়?

তাওহিদা রশিদ বলেন, অঞ্চলভেদে এটি কমবেশি হচ্ছে। বজ্রঝড় ও বজ্রপাত এপ্রিল এবং মে মাসের কিছু সময় ধরে প্রতি বছরই হয়। এ বছর কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন,এর কারণ ওখানে হাওরের জন্য জলীয় বাষ্প বেশি হয়। সে কারণেই সিলেটের ওই অঞ্চলটিতে বর্জপাতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

বজ্রপাত ঠেকাতে গাছ লাগানো উচিত কোথায়?

অধ্যাপক তাওহিদা রশিদ বলেন, তালগাছের মতো গাছগুলো রোপণ করা উচিত খোলা মাঠে, তা হলেই এটি বেশি কাজে দেবে। কিন্তু কিছু প্রকল্পের অধীনে সেগুলো লাগানো হচ্ছে রাস্তার পাশে। ফলে বর্জপাত মানুষ বা গাড়ির ওপরই পড়বে।

তিনি বলেন, ঘন বনও ব্রজপাতের জন্য ভালো। কারণ এটি তাপমাত্রাও কমায়। গ্রামে ছোট ছোট গাছের ঝোঁপ থাকলে লোকজন সেখানেও আশ্রয় নিতে পারে। সূত্র বিবিসি বাংলা।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *