নিজস্ব প্রতিনিধি:: দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও-হাসকুঁড়ি রাস্তায় ত্রাণ প্রকল্পের সেতু (কালভার্ট) নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যথাযথ দেখভাল না করায় ঠিকাদার প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না করে নিম্নে মানের সামগ্রী ব্যবহার করে সেতুর কাজ শেষ করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এদিকে সেতু নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন ভুঞাকে মৌখিকভাবে একাধিকবার অবগত করেও প্রতিকার পাননি বলে জানাগেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি সেতু নির্মাণের জন্য ৪ কোটি ৩৪ লক্ষ ২৫ হাজার ৬০৭ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও-হাসকুঁড়ি রাস্তার জিল্লুর মিয়ার বাড়ির সমানের খালে ২৭ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৫৬ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স স্মার্ট এন্টারপ্রাইজ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনিয়ম করে আসছিল। বর্ষা মৌসুমে পানির মধ্যে তাড়াহুড়ো করে কাজ করেছে তারা। দিনের বেলায় কাজ না করে রাতের অধিকাংশ সময়ে রডের সাথে বাঁশ মিশিয়ে ঢালাই কাজ সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজটির বিভিন্ন অংশের ঢালাই খসে পড়ছে। অনেক জায়গায় রডের সাথে ঢালাই কাজে ব্যবহৃত বাঁশও বেরিয়ে আসছে। ব্রিজের পশ্চিমের অ্যাপ্রোচের দুই পাশের ঢালাই খসে পড়ে বাঁশগুলো বেরিয়ে এসেছে।
ব্রিজের নির্মাণ শ্রমিক বীরগাঁও গ্রামের মো. রফিজ আলী জানান, গত বর্ষাকালে ঠিকাদার এ ব্রিজের কাজ শুরু করেছিল। আমি এই ব্রিজে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছি। শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছিল ঠিকাদার। আমি অনেক সময় প্রতিবাদ করেছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তারা ময়লা পাথর ও বালি ব্যবহার করেছে। সেই সাথে রডের সাথে বাঁশের ফলা ও ছোট-ছোট বাঁশ ব্যবহার করেছে। এ কারণে আজ ব্রিজটির ঢালাই ভেঙে-ভেঙে পড়ে যাচ্ছে।
বীরগাঁও গ্রামের মির্জা হোসেন জানান, আমরা অনেক বার বাধা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনেনি। আমরা দেখেছি খুব নিম্নে মানের কাজ হয়েছে এই ব্রিজে।
পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য জুবায়েল আহমদ জানান, আমি অনেক বার বাধা দিয়েছি ঠিকাদারকে। বর্তমানে ব্রীজটাতে ফাটল দেখা দেলাইছে। ফাটলেদি বাঁশ বারাইগেছে। আমরা সব সময় জানাইছি- এই কাজ ঠিকমতো অরনা।
পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর কালাম বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য আমাকে কাজের অনিয়মের কথা শুনিয়েছিল। কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। আর যে ঠিকাদারে এই কাজটা করেছে তার সাথেও আমার কোন দেখা হয়নি। নির্মাণের ৪-৫ মাসের মধ্যে ব্রিজের বিভিন্ন অংশ খসে পড়ে এখন রডের সাথে বাঁশ বেরিয়ে আসছে। রডের সাথে বাঁশ ব্যবহার এটা মেনে নেওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স স্মার্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকার কথা বলতে রাজি হননি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন ভুঞা প্রথমে বক্তব্য দেবেন বললেও পরে বলেন, ছুটির দিনে কথা বলবো না, অফিস চলাকালীন সময়ে আসেন, এ বিষয়ে কথা বলবো।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আবুল কলাম বলেন, যদি ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তা তদন্ত করা উচিত কর্তৃপক্ষের।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক জানান, কোনো সেতু বা কালভার্ট নির্মাণে বাঁশ ব্যবহারের সুযোগ নেই। কারও কাছ থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে।