নিউজ ডেস্ক:: গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় গ্যাস ও পানির সংকটে নাকাল নগরবাসী। অন্যদিকে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস ও পানির সংকটে উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকার টঙ্গী, বোর্ডবাজার, সাতাঈশ, গুটিয়া, বড়বাড়ি, কলেজগেট, হোসেন মার্কেট, চেরাগআলী, টিএন্ডটি, মরকুন, বিসিক, পূবাইল, মালেকের বাড়ি, হারিকেন, চৌরাস্তা ও কোনাবাড়িসহ আশপাশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাস না পেয়ে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতসহ অধিকাংশ শিল্প কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশেষ করে বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংকটের কারণে ছোট ছোট বাচ্চাদের খাবার তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে।
অনেক মহল্লার ছোট ছোট টিনসেট বাড়ির মালিকরা কোনো রকমে নিজেরা কষ্ট করে থেকেও ঘর ভাড়া দিয়ে চলেন। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে ভাড়াটিয়ারা থাকতে চান না। অনেকের বাড়িতে খালি রুম পড়ে আছে। ভাড়া দিতে পারছেন না। এরপরও গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল প্রতি মাসে পরিশোধ করতে হচ্ছে। গাজীপুর দেশের সবচে বড় সিটি করপোরেশন হলেও এখানে নেই কোনো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা।
নগরবাসীর অভিযোগ, গেলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বিভিন্ন প্রার্থীরা ঘরে ঘরে গিয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু জয়লাভ করার পর তারা আর সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। গেলো পাঁচ বছর এই সিটি করপোরেশনে কোনো ধরনের উন্নয়ন হয়নি বলেই চলে। গেলো তিন মাস ধরে মধুমিতা এলাকার আরিচপুরে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
আরিচপুর এলাকার মো. মোবারক হোসেন বলেন, বিশুদ্ধ পানিতো দূরের কথা, সাধারণ পানিই জুটছে না। গত কয়েকদিন যাবত পানির অভাবে দৈনন্দিন কাজ করতে পারছি না। প্রতিদিন গোসল না করে অফিসে যেতে হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ির মালিক মো. আবুল কাসেম, সরদার শাহ আলম, আইনদ্দিন মুন্সীসহ আরও অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, আমরা ছোট বাড়ির মালিক। কয়েকটা রুম ভাড়া দিয়ে সংসার চালাই। গ্যাস ও পানির সংকটের কারণে রুম খালি পড়ে আছে। কেউ ভাড়া নিতে চায় না। যারা আছেন তারাও চলে যাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে সবচে সমস্যায় পড়েছে স্কুলপড়ুয়া ছোট ছোট বাচ্চারা। ঠিক সময়ে রান্না করতে না পারার কারণে তাদেরকে না খেয়েই স্কুলে যেতে হচ্ছে। স্কুল থেকে এসে খাবার পাবে এমন নিশ্চয়তাও নেই।
তাদের অভিযোগ বড় বড় বাড়িগুলোতে গ্যাস থাকলেও আমরা গ্যাস পাই না। ডা: বজলুর রহমান বলেন, ভোটের সময় এলে প্রার্থীরা হাতে-পায়ে ধরে ভোট নিলেও এলাকায় কোনো কাজ করেন না।
টঙ্গী বিসিকের ব্লু ফ্যাশনের মালিক মো. মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, গত দুই বছর ধরে পোশাক কারখানার মালিকরা গ্যাসের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এরইমধ্যে এলাকার একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
গ্যাস সংকটের বিষয়ে টঙ্গী তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী অজিত চন্দ্র দেব বলেন, গত কয়েক মাস যাবত গ্যাস নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে গ্যাস সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। অবৈধ সকল গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এমএ রাহাতুল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশন বিশুদ্ধ পানি ও গ্যাস নিয়ে কাজ করছে। যেসকল এলাকায় এখনও বিশুদ্ধ পানি ও গ্যাসের অভাব রয়েছে সেসব এলাকায় দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।