পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংক তিন মাসের মধ্যে চালু

নিউজ ডেস্ক:: আগামী তিন মাসের মধ্যে চালু হচ্ছে পুলিশের বিশেষ ব্যাংক। ওই ব্যাংকের নাম হল কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শর্ত হিসেবে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪০০ কোটি টাকা জমা দেয়া হবে।

একই সংঙ্গে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সব ধরনের চূড়ান্ত কাগজপত্র দাখিল করা হবে। পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে এরই মধ্যে ওই টাকা তোলা হয়েছে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে এরই মধ্যে ২৭ হাজার টাকা করে নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

গত সপ্তাহে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মিডল্যান্ড ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি মাশিউল হক চৌধুরী। পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রধান কার্যালয়সহ ছয়টি কার্যালয়ের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হবে। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে হবে গুলশানের পুলিশ প্লাজা কনকর্ড টাওয়ারে। আগামী ২ বছরের মধ্যে ব্যাংকটিকে ব্যাপকভাবে প্রসারের পরিকল্পনা রয়েছে।

সারাদেশে পুলিশ সদস্যদের বেতনও এই ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া হবে। আপাতত পুলিশ সদস্যরাই হবেন এই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার। বাইরে থেকে কাউকে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যুক্ত করা হবে কিনা সে বিষয়ে তিন বছর পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সূত্রমতে, কমিউনিটি ব্যাংকের লভ্যাংশ যাবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে। ট্রাস্টের মাধ্যমে ওই টাকা ব্যয় হবে পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে। কোনো পুলিশ সদস্য আহত হলে তার চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা হবে ওই লভ্যাংশ থেকে।

নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরাও আর্থিক সহায়তা পাবেন। তাছাড়া তাদের সন্তানের শিক্ষা সহায়তাও এখান থেকে দেয়া হবে।

পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (এস্টেট) ড. শেয়ায়েব রিয়াজ আলম বলেন, অন্যান্য ব্যাংক যে নিয়ম অনুযায়ী চলে কমিউনিটি ব্যাংকও সেই নিয়ম অনুযায়ী চলবে। তবে বিদ্যমান ব্যাংকগুলো থেকে পুলিশ সদস্যরা যে ধরনের সুবিধা পান তার চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা পাবেন কমিউনিটি ব্যাংক থেকে।

ব্যাংকটির পরিচালনায় থাকবেন পুলিশরাই। পরিচালনা পরিষদের প্রধান হবেন আইজিপি। পরিষদের সদস্যরা কেউই স্থায়ী নন। পদাধিকারবলে (পুলিশে যার যে পদ) পরিচালনা বোর্ডের পদবি নির্ধারণ করা হবে।

কেউ চাকরি থেকে অবসর নিলে তিনি পরিষদের পদে বহাল থাকতে পারবেন না। এতে অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এখানে স্বচ্ছতার মাত্রা অধিকতর হবে। তাই অন্যান্য ব্যাংকে আস্থার সংকট থাকলেও এই ব্যাংকে তা থাকবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম বলেন, কমিউনিটি ব্যাংকে সব ধরনের গ্রাহক লেনদেন করতে পারবেন। তবে পুলিশ সদস্যরা স্বল্পসুদে ঋণ নেয়ার সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে নিম্ন পদের পুলিশ সদস্যরা বেশি উপকৃত হবেন।

কারণ বিদ্যমান ব্যাংকগুলোকে পুলিশ, সাংবাদিক ও অ্যাডভোকেটদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অলিখিত বিধিনিষেধ আছে। তাই নিচের পদের পুলিশ সদস্যরা কোনো ব্যাংকে ঋণ নিতে চাইলে তারা ঋণ পান না।

কিন্তু কমিউনিটি ব্যাংক থেকে তারা সহজেই ঋণ পাবেন। কমিউনিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউহুল হক বলেন, ‘স্বপ্নের এই ব্যাংকটির কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। গ্রাহকদের ব্যতিক্রমী সেবা দিয়ে ব্যাংকটিকে এক নম্বর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবাইকে আন্তরিকভাবে সেবা দেয়ার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।’

উল্লেখ্য, পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবনা দেন পুলিশের তৎকালীন আইজি একেএম শহীদুল হক।

এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, মূলধনের টাকা জোগাড় করতে পারলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর পরই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য মূলধন সরবরাহের কাজ শুরু করে পুলিশ সদর দফতর।

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে এ টাকা সংগ্রহ করা হয়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *