পদত্যাগ না বহিষ্কার; এ নিয়েও বিতর্কে রনি

নিউজ ডেস্ক:: একের পর এক বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির। তবে এসব বিতর্ক সৃষ্টি করেন তিনি নিজেই। কোচিং সেন্টারের মালিককে মারধরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দেন নিজের ফেসবুক ওয়ালে। এ নিয়েও বিতর্কে উঠে যান রনি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে তার পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষনাটি। অব্যাহতি চেয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বরাবরে আবেদন করা কপিটিও (স্ক্রিনশট) এসব গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেছে।

আবার কোন কোন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে কেন্দ্র থেকে তাঁকে বহিষ্কারের খবর। সেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের স্বীকারোক্তি মূলক বক্তব্যের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে বহিষ্কারাদেশের কোনো কপি প্রকাশ পায়নি।
আবার কয়েকটি গণমাধ্যমে সাইফুর রহমান সোহাগ মুঠোফোন রিসিভ না করায় বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

আবার সাইফুর রহমান সোহাগ রনির বিষয়ে গণমাধ্যমে কোন বক্তব্য না দেওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রচার করেছেন অনেক নেতাকর্মী। এ ব্যাপারে কোনোরকম বিভ্রান্তি না ছাড়ানোর অনুরোধ, এমনকি স্থুল হুমকিও দেয়া হয়েছে।

ফলে নুরুল আজিম রনির পদত্যাগ বা বহিষ্কার নিয়ে আজ শুক্রবার দিনভর চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। রনির অব্যাহতির আবেদনপত্র প্রচার পেলেও কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারাদেশের পত্র প্রকাশ না পাওয়ায় এবং একেক গণমাধ্যমে একেক রকম খবর প্রচার হওয়ায় এ নিয়ে এখনো রয়ে গেছে ধোঁয়াশা ও বিতর্ক।

চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি কোচিং সেন্টারের মালিককে পেটানোর ঘটনায় নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর পেটানোর ভিডিওটি বৃহস্পতিবার ভাইরাল হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠলেও শুক্রবার ফেসবুকে ভাসছে রনির পদত্যাগ না বহিষ্কার এ প্রশ্ন নিয়ে কৌতুহলী নেতাকর্মীদের স্ট্যাটাস।
আর এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করা হলেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ মুঠোফোন রিসিভ করেননি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনও বিষয়টি সম্র্পকে অবগত নন বলে জানান।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা বলেন, বিষয়টি মীমাংসিত। রনি নিজেই যেখানে পদ ছাড়ার ঘোষনা দিয়ে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেছেন তখন তিনি পদ ছাড়ার মানসিকতা নিয়েই করেছেন। তিনি আর পদে নেই, ব্যস। এখানে বহিষ্কারের প্রশ্ন অমুলক।

নুরুল আজিম রনি বৃহস্পতিবার নিজেই তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন- পিতা মুজিবুরের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে আমি সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম। একান্ত ব্যক্তিগত কারণে আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
এমতাবস্থায় সংগঠনের জৈষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের প্রতি আবেদন করছি। প্রাণের ছাত্রলীগ ভালো থেকো, স্বকীয়তা নিয়ে লড়াই করার সৎ সাহস রেখো। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

নুরুল আজিম রনি ফেসবুক ওয়ালের স্টাটাসে একান্ত ব্যক্তিগত কারণে পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা বললেও বিষয়টি মোটেও তা নয়। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীর ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়ে উঠে। বয়ে যায় বিতর্কের ঝড়। আর তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মুখে পদ ছাড়ার ঘোষনা দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন তিনি। যা নিজের ফেসবুক ওয়ালে সেঁটে দেন তিনি নিজেই। আর এই স্ট্যাটাস নতুন করে আবারও বিতর্কের সৃষ্টি করে।

এর আগে অতিরিক্ত ফি ফেরতের জন্য চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহিদ খানকে মারধর করে বির্তকের মুখে পড়েন রনি। এই ঘটনায়ও নগরীর চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন অধ্যক্ষ ড. জাহিদ খান। এর আগেও নানা কর্মকান্ডে একের পর এক বিতর্কে জড়ান রনি। যার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে চরম অস্থিরতা চলছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগে।

প্রসঙ্গত, দ্বিধাবিভক্ত ছাত্রলীগে নুরুল আজিম রনি নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ বর্তমান সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির সমর্থিত।

গত কয়েক দশক ধরে এই দুই নেতার বলয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসছে চট্টগ্রামে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর ও ওয়ার্ড কমিটির প্রতি পর্যায়ে এই দুই নেতায় বিভক্ত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনসমুহের নেতাকর্মীরা।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *