নিউজ ডেস্ক::বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দরুইন গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তিনি। সেদিন তিনি একাই লড়াই করে বাঁচিয়ে দিয়েছেন সহযোদ্ধাদের প্রাণ।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার (১৮ এপ্রিল) তার নিজ গ্রামের বাড়িতে আলোচনা সভা, দোয়া, মোনাজাতসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোস্তফা কামাল। পিতা হাবিলদার মো. হাবিবুর রহমান ও মাতা মালেকা বেগম। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর স্ত্রীর নাম পিয়ারা বেগম। আশির দশকে মেঘনা নদীর ভাঙ্গনে দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের পৈত্রিক বাড়িটি বিলীন হয়ে যায়।
১৯৮২ সালে সরকার সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে মৌটুপি গ্রামে কিছু সম্পত্তিসহ তার-পিতা-মাতার জন্য একটি পাকা বাসভবন নির্মাণ করে তাদের পুনর্বাসিত করে। বর্তমানে এ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল নগর রাখা হয়েছে। এ গ্রামের বাড়িতেই বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মা মালেকা বেগমসহ পরিবারের অন্যন্য সদস্যরা বসবাস করেন। বাড়ির পাশেই ২০০৮ সালে সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’।
মোস্তফা কামালের ছোট বেলা থেকেই স্কুলের পড়ালেখার চেয়ে ভালো লাগত সৈনিকদের কুচকাওয়াজ। নিজেও স্বপ্ন দেখেন একদিন সৈনিক হওয়ার। ১৯৬৭ সালে কাউকে কিছু না বলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ক্রমশই স্বাধীনতার দাবিতে সারা দেশ উত্তাল হতে থাকে। ৭মার্চ জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে বীরদর্পে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন মোস্তফা কামাল।
সিপাহী মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল ১টি মুক্তিযোদ্ধাদের দল ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ঠেকানোর জন্য আখাউড়ার দরুইন গ্রামে অবস্থান নেয়। সংখ্যায় বেশি ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকা-বাহিনীর সাথে মোকাবেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল অদম্য মনোবল। প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর জন্য প্রস্তত থাকে অস্ত্র হাতে।
১৮ এপ্রিল সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছিল। সকাল ১১টার দিকে শুরু হয় প্রচন্ড বৃষ্টি। একইসাথে শত্রুর গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারও পাল্টা গুলি করতে শুরু করলো। শুরু হলো সম্মুখ যুদ্ধ। মেশিনগান চালানো অবস্থায় এক মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগে। মুহূর্তের মধ্যে মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চালাতে লাগলেন মেশিনগান। গর্জন করে উঠে তার হাতের অস্ত্র।
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কোন অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল না। সংখায়ও অনেক কম ছিলো তারা। আর পাকিস্থানী সৈন্যরা সংখায় ছিল অনেক বেশি ও ভারি অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত তারা। হয় সামনা সামনি যুদ্ধ করে মরতে হবে, নয় পিছু হটতে হবে। কিন্তু পিছু হটতে হলেও সময় দরকার। ততক্ষণ অবিরাম গুলি চালিয়ে শত্রুদের আটকিয়ে রাখতে হবে। কে নেবে এই মহান দায়িত্ব?
এমন সময় আরো একজন মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি বিঁধে। ততক্ষণে মোস্তফা কামাল সব সহযোদ্ধাকে সরে যেতে বলেন। পরিখার মধ্যে সোজা হয়ে চালাতে লাগলেন স্টেনগান। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ছেড়ে যেতে না চাইলে তিনি আবারো সবাইকে নিরাপদে যেতে বলেন। অবিরাম গুলি চালাতে থাকেন তিনি। তার গোলাবর্ষণে শত্রুদের থমকে যেতে হয়েছে। মারা পড়েছে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য।
ততক্ষণে দলের অন্য সদস্যরা নিরাপদে পিছু হটেছেন। একসময় মোস্তফা কামালের গুলি শেষ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একটি গুলি এসে লাগে তার বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মারা যান মোস্তফা কামাল। তার এমন বীরত্বের কারণে সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষা পায়। দরুইনের মাটিতে সমাহিত করা হয় জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানকে।