অর্থনীতি ডেক্স:: দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হল ব্যাংকিং খাত। কিন্তু এ খাত ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ এ খাতের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (আইসিসিআই) ত্রিমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের আইসিসিআইর বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, দেশে খেলাপি ঋণ কমানোর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে ঋণ খেলাপিদের শাস্তি প্রদান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
মন্দ ঋণ সমস্যার সমাধানে ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতির গভীরে যেতে হবে। ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মূলধনকে মন্দঋণ প্রভাবিত করেছে। শিল্প খাতের বড় বড় কর্পোরেট গ্রাহক সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে বাধাহীন এবং দক্ষ সঞ্চয়-বিনিয়োগ পদ্ধতি।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু মূলধনের বাজার এখনও উন্নত হয়নি। তাই অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় গতিশীল করতে এবং বিনিয়োগকারীদের মূলধনের জোগান দিতে মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল। এর অর্থ হল অর্থনৈতিক খাত কতটা কার্যকর।
এতে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্পদ ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের এক-চতুর্থাংশ। এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটো বিশেষায়িত উন্নয়ন ব্যাংক, ৪০টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং নয়টি বিদেশি ব্যাংক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা অনুসারে ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পাঁচ বছরে মোট ঋণের ক্ষেত্রে মন্দ ঋণের গড় অনুপাত ছিল ২৭ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ২২ দশমিক ৫৬ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে।
২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ১০ দশমিক ১ শতাংশ। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপরিচালিত ব্যাংকের শতকরা হার সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৭ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ঋণ ৮ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশই মন্দ ঋণ।
এক্ষেত্রে পুনর্নির্ধারিত ঋণ সংযোজন করা হলে মন্দ ঋণের হার দাঁড়াবে ১৭ শতাংশ। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে মন্দ ঋণ ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।