নিউজ ডেস্ক:: কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন ও এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অভিযোগে বহিষ্কৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বাড়ি ঝিনাইদহে।
ছাত্রলীগ নেত্রী এশা ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরের মো. ইসমাইল হোসেন বাদশার মেয়ে। বাদশা জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এশা ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি ও ২০১২ সালে ঝিনাইদহ সরকারি নুরুন্নাহার মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইসরাত জাহান এশা কর্তৃক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাম্পাস জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি হলের গেটে ছাত্রলীগের লাগিয়ে দেয়া তালা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে ছাত্ররা। হলের বাইরে আসতে না পারলেও সবগুলোর ছাত্রী হলের ভেতরেও বিক্ষোভ চলে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ঢাবির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোরশেদা খানমকে ডেকে নিয়ে মারধর ও পায়ের রগ কেটে দেন ছাত্রলীগ নেত্রী সভাপতি ইসরাত জাহান এশা, এমন অভিযোগ করেন হলের ছাত্রীরা ।
মাঝরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সাধারণ ছাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রলীগের সভাপতি ইসরাত জাহান এশাকে হল থেকে বহিষ্কার করেন।
অপরদিকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষর এক বিজ্ঞপ্তিতে এশাকে বহিষ্কার করা হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইসরাত জাহান এশার ৩০৭ নম্বর রুমে মারধর হয়। হলের এক শিক্ষার্থীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে বলেও তারা অভিযোগ জানায়। অপর একজনের মাথায় সেলাই দেয়া হয়েছে। হলের দুই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে. আহত ছাত্রী মোরশেদা খানমকে চিকিৎসা শেষে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে তার স্বজনেরা রাজধানীর মগবাজারের বাসায় নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
কবি সুফিয়া কামাল হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক শামীম বানু জানান, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেখানে যাই। আহত শিক্ষার্থীকে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে স্বজনের সঙ্গে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ‘ছাত্রীর সামান্য পা কেটে গেছে। তার আঘাত গুরুতর না। তবে এটা বড় অপরাধ। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
রগ কাটা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না না, এমন কিছু না।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর অন্য শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে সবাই হলের নিচে নেমে অবস্থান নেয়। তাদের বুঝিয়ে পরবর্তীতে রুমে নেওয়া হয়েছে।’
শামীম বানু বলেন, ‘অভিযুক্ত ছাত্রীকে প্রক্টর বডির হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।’
মোরশেদাকে দেওয়া চিকিৎসা সম্পর্কে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ইমারজেন্সির মেডিক্যাল অফিসার ডা. গালিব বলেন, ‘রাত দেড়টার দিকে মোরশেদাকে নিয়ে আসেন চার-পাঁচজন। তার সঙ্গে যারা ছিল তারা পরিচয় দিতে চাচ্ছিল না। মোরশেদার পায়ের পেছনে ও সামনে কেটেছে। পেছনের কাটা একটু গভীর। ড্রেসিং করেছি, সেলাই লেগেছে।’
মোরশেদার আঘাত কীভাবে লেগেছে জানতে চাইলে ডা. গালিব বলেন, ‘আসলে আমার কাছে যখন এসেছে, তখন আমি চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এটা ইচ্ছাকৃত, না কেউ আঘাত করেছে, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরি ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।
এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত রবিবার দুপুরে কোটা সংস্কার দাবিতে শাহবাগে জড়ো হয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের অবস্থানে রাত আটটার দিকে পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এই সংঘর্ষ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অনেককে আটক করে পুলিশ।
এরপর গতকাল সোমবারও দিনভর বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জাসান খান কামালের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি বৈঠক করেন।