“প্রামাণ্যচলচ্চিত্রে প্রতিবিম্বিত হোক, চিরায়ত বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য”- এই স্লোগানকে সামনে রেখে গত ৬ এপ্রিল ২০১৮ শুক্রবার সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছিল প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে নির্মিত দু’টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী।
বৃটিশ উপনিবেশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, মহাত্মা গান্ধীর স্নেহধন্য ও রাজনৈতিক সহচর, বেগম রোকেয়া পদক ও জাতীয় সমাজসেবা পদকপ্রাপ্ত দেশব্রতী সুহাসিনী দাশের জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত ‘নিভৃতচারিনী’ এবং সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরে সুপ্রাচীন লাউর রাজ্য, পনাতীর্থ ও হযরত শাহ আরেফিন (র:) এর ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে নির্মিত ‘পূণ্য সলিল সকাশে’ নামে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দু’টি এই বিশেষ প্রদর্শনীতে দেখানো হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক অডিটোরিয়ামে উক্ত প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ সফিউল আলম, অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, শিক্ষাবিদ ও গবেষক দীপক কান্তি দে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু সুফিয়ান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, রাজনীতিবিদ করুণাসিন্ধু বাবুল সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, সাংবাদিক সহ সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ পাবেল চৌধুরী এবং প্রামাণ্য চলচ্চত্রি দু’টির পটভূমির ওপর আলোকপাত করেন বিশিষ্ট প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে। প্রদর্শনীতে আমন্ত্রি অতিথিবৃন্দ নির্মাতা নিরঞ্জন দে’র এই দু’টি সৃষ্টিকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দু’টি অসামান্য ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রদর্শনীতে উপস্থিত দর্শকবৃন্দ পিন-পতন স্তব্ধতায় এই প্রমাণ্য চলচ্চিত্র দু’টি উপভোগ করেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রমাণ্য চলচ্চিত্র আরও নির্মাণ করার জন্য নির্মাতাকে অনুরোধ করেন। প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দু’টি দেখে অনেক দর্শক আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন এবং তাঁরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
অতিথি বক্তারা বলেন, এই ধরনের প্রামান্য চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং প্রদর্শন দেশের নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, সংস্কৃতিকবান্ধব, প্রগতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে উদ্বুদ্ধ করবে। সেই সাথে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক দিক থেকে বর্হিবিশ্বে উজ্জ্বল হবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি।
উলেখ্য, নির্মাতা নিরঞ্জন দে নির্মিত ‘নিভৃতচারিনী চলচ্চিত্রটি ২০১০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর আয়োজিত ‘ মুক্তি ও মানবাধিকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এবং সুধী মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
‘পুণ্য সলিল সকাশে প্রামাণ্য চিত্রটি ইতিমধ্যে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের আমন্ত্রণে এবং ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব লিভারেল আটর্স এর আমন্ত্রণে প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়াও নির্মাতা নিরঞ্জন দে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম এবং সুর সাধক ও সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রাম কানাই দাসকে নিয়ে আরও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। নিরঞ্জন দে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে ধারণ করে নানা বিষয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে নিয়োজিত রয়েছেন।