হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যার ঘটনায় আদালতে তার বাবা সায়েদ আলী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তবে এর বেশি কিছু জানা সম্ভব হয়নি।
৭ এপ্রিল শনিবার সকাল থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। দীর্ঘ সময়ের এ জবানবন্দীতে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আদালতে বর্ণনা করেন সায়েদ আলী।
আদালতের একটি সূত্র জানিয়েছে, জবানবন্দীতে সায়েদ আলী স্বীকার করেন, তিনি বিউটিকে নানার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে তুলে দেন খুনিদের হাতে।
একই দিন বিকেলে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দী দেন।
এর আগে ৬ এপ্রিল শুক্রবার রাতে বাবুল মিয়া ও ময়না মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। জবানবন্দীতে ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডের কথা এবং বাবুল ধর্ষণের কথা স্বীকার করে।
একই দিন বিউটির নানী ফাতেমা বেগম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দী দেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
এ ছাড়াও বাবুলকে রিমান্ডে নেওয়ার পর থেকেই বিউটির মা হুসনে আরা ও বিউটির ভাই সাদেক মিয়া পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর কন্যা বিউটি আক্তারকে ২১ জানুয়ারি ধর্ষণ করে একই গ্রামের কলম চান বিবির পুত্র বাবুল মিয়া। এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সায়েদ আলী। ওই মামলায় সাক্ষী করা হয় সায়েদ আলীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পরই বিউটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণীপুর গ্রামে তার নানা বাড়িতে।
১৬ মার্চ রাতে সেখান থেকে নিখোঁজ হয় বিউটি। পর দিন ১৭ মার্চ গুণীপুর থেকে চার কিলোমিটার দূরে পুরাইকলা হাওড়ে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৮ মার্চ সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া ও তার মা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কলম চান বিবিকে আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকেও।
কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাবুলের মা কলম চান বিবির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার। এতে কলম চান বিবি জয়ী হন। নির্বাচনের আগে কলম চান বিবিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে বারণ করেন ময়না মিয়া। কিন্তু কলম চান তা না শুনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। এই থেকেই আক্রোশ ছিল দুই পরিবারের মধ্যে।