ফিলিস্তিনিদের দুঃসাহসী লড়াই ‘ঘরে ফেরার যাত্রা’, ভীত ইসরাইল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের দখল করে নেয়া বাড়িঘরে ফিরতে এক দুঃসাহসী লড়াই শুরু করেছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনগণ। খালি পায়ে হেঁটে সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ। তারা ইসরাইলি সীমান্ত ডিঙিয়ে ফিরতে চান নিজ বাড়িতে।

গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ‘ঘরে ফেরার যাত্রা’ বা মার্চ অব রিটার্ন নামে এ অভিনব কর্মসূচি। এতে যোগ দিয়েছেন নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৭ হাজার ফিলিস্তিনি। তারা জানিয়েছেন, ছয় সপ্তাহ ধরে ঘরে ফেরার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

গাজা থেকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা মার্চ করে ইসরাইলি সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আগে থেকে ঘোষণা দেয়ার পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে দখলদার ইসরাইল।

ইহুদিবাদীরা এতদিন ভেবেছিল দমনপীড়ন চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে স্তব্ধ করে দিতে পেরেছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আন্দোলনের সমর্থক আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে গোপন আঁতাত তৈরি করে নিয়েছে ইসরাইল।

এ অবস্থায় পবিত্র জেরুজালেম নগরীকে রাজধানী করে বিংশ শতাব্দীর বিষফোঁড়া ইসরাইলকে পরিপূর্ণ অবয়বে রূপ দিয়ে ফিলিস্তিনের নামনিশানা মুছে দেয়া ছিল সময়ের ব্যাপার।

কিন্তু এমন একটি সময়ে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, যা থেকে প্রমাণিত ইহুদিবাদী দখলদারির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের অসম লড়াই কখনই স্তব্ধ করে দেয়া যাবে না।

এ অবস্থায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের রুখে দিতে স্নাইপার রাইফেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তারা এ পর্যন্ত ১৭ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি। ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের পর এতবড় প্রাণহানি আর ঘটেনি।

ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের মূলে রয়েছে ইসরাইলের সীমানার ভেতরে তাদের হারানো বাড়িঘরে ফিরতে দেয়ার দাবি। ছয় সপ্তাহ ধরে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরপূর্তিকে সামনে রেখে ফিলিস্তিনিরা ‘ঘরে ফেরার’ কর্মসূচি শুরু করেছেন।

ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা লাগাতার আন্দোলনের সূচনা করছেন। এর মূলকথা হল- দখলদার ইসরাইলের সীমানার মধ্যে থাকা শহর ও গ্রামগুলোর মালিক ফিলিস্তিনিরা। তাদের সেখানকার নিজ বাড়িঘরে ফিরতে দিতে হবে।

অন্যদিকে ইসরাইলি বাহিনী সীমান্ত বরাবর একটি ‘নো- গো জোন’ তৈরি করেছে। যার মানে হল সীমান্তের ওই এলাকায় ফিলিস্তিনিরা যেতে পারবেন না।

ফিলিস্তিনিদের ঘরে ফেরার যাত্রা রুখে দিতে তারা ইসরাইল সৈন্য সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়িয়েছে। সেখানে ট্যাংকবহরের পাশাপাশি স্নাইপার রাইফেলধারী ঘাতক বাহিনী মোতায়েন করেছে।

তবে ইসরাইলের কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই গাজা-ইসরাইল সীমান্তে ফিলিস্তিনিরা তাদের বিক্ষোভের প্রস্তুতি হিসেবে উত্তরের বেইত হানুন থেকে মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহ পর্যন্ত পাঁচটি শিবির স্থাপন করে।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের সমাবেশকে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পিত উসকানি আখ্যা দিয়ে এর জন্য ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী দল হামাসকে সতর্ক করে।

গাজা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলো মিলে এ ঘরে ফেরার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তারা ইসরাইলের সতর্কতায় কান দেয়নি। সাধারণ ফিলস্তিনিরাও হুমকি উপেক্ষা করে সীমান্তে জড়ো হয়েছেন, যার সংখ্যা এরই মধ্যে ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

সীমান্ত বরাবর ওই শিবিরগুলোতে যে জনসভা হয়েছে, তাতে হামাসের নেতারা বক্তৃতা করেন। হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ইসরাইলকে কখনই স্বীকৃতি দেয়া হবে না।

ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইসরাইল ঘরে ফেরা কর্মসূচি বানচালে বাড়াবাড়ি রকমের শক্তি প্রয়োগ করেছে। এমনকি ড্রোন ব্যবহার করে টিয়ার গ্যাস শেল ফেলার ঘটনাও ঘটেছে বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন।

তবে ইসরাইলির বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ও গুলির বিরুদ্ধে টায়ার পুড়িয়ে ও পাথর নিক্ষেপ করে জবাব দিচ্ছে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মানসুর বলেছেন, চৌদ্দ শতাধিক বেসামরিক মানুষ এতে আহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, শুক্রবারের প্রাণহানির সম্পূর্ণ দায় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের।

জাতিসংঘের রাজনৈতিকবিষয়ক ডেপুটি প্রধান তায়ে-ব্রুক জেরিহুন বলেছেন, ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং আইনের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, পরিস্থিতি আগামী কয়েক দিনে আরও খারাপ হতে পারে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক জরুরি অধিবেশনে এ ঘটনার নিন্দা করলেও একটি বিবৃতির ব্যাপারে একমত হতে পারেনি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *